ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

ধারের টাকা দিতে না পারায় ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে জোর করে বিয়ে!

এনামুল হক এনা, উপকূলীয় প্রতিনিধি, বরিশাল

প্রকাশিত: ২০:০০, ২৩ মার্চ ২০২৫

ধারের টাকা দিতে না পারায় ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে জোর করে বিয়ে!

ছবি: সুদি কারবারি শিপন ও ফুফু জাহানারা বেগম

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালীতে ধারে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নজরুল ইসলাম নামে এক দিনমজুর। সুদি কারবারি শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে টাকাগুলো ধার করেন তিনি। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাঁর সঙ্গে নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ফুফু জাহানারা বেগম বেড়াতে নিয়ে গিয়ে এমন কাণ্ড করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, চল্লিশোর্ধ্ব সুদি কারবারি শিপন বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশী জাহানারা বেগম। শিশুটিকে দুই দফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করায় ভুক্তভোগী পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মূলত: ধারের টাকা পরিশোধ না করাতেই সুদি শিপনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, প্রায় ৪ মাস আগে দিনমজুর নজরুল ইসলাম তাঁর বোন জাহানারার মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করেন। সময়মতো টাকাগুলো পরিশোধ করতে পারেননি বলে দাবি জাহানারার। ধারদেনায় জর্জরিত নজরুল। এরই মধ্যে পাওনাদার শিপনকে নিয়ে ফাঁদ পাতেন জাহানারা। তার অংশ হিসেবে মাসখানেক আগে ভাই নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে কলাপাড়া শহরের একটি বাড়িতে নেন। সেখানে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একজন মৌলভি ডেকে শিপনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেন। এর পর শিশুটি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বলে কান্না করেন। সম্প্রতি পাওনাদার শিপন ও জাহানারা ওই শিশুকে দুই দফায় তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালালে এলাকাবাসীর বাধায় তা সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগী শিশুটি (১২) জানায়, তাকে ভয় দেখিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে। এর পর দুইবার জোর করে তুলে নিতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেন। সে সময় অন্য একটি বাড়িতে পালিয়েছিল সে।

শিশুটির মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ননদের মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। কিন্তু শিপনের বউ-বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে।’

অন্যদিকে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শিপন ও জাহানারা। তারা বলছেন, ধারের টাকা পরিশোধ করবে না বলেই যড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

শিশুটির প্রতিবেশী রুবেল মিয়া জানান, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের দিন অটোরিকশায় করে ৩-৪ জন লোক নিয়ে এসে মেয়েটিকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় তিনি জানতে চান, কেন শিশুটির সঙ্গে জোরজবরদস্তি করছেন– জবাবে শিপন দাবি করেন মেয়েটি তাঁর স্ত্রী। সে সময় মেয়েটিকে তুলে নিতে বাধা দেন তিনিসহ আশপাশের লোকজন। এর পরও মেয়েটিকে তুলে নেবে বলে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন শিপন। 

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, ভুক্তভোগী শিশুটির নিরাপত্তা ও বাল্যবিয়ে রোধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কলাপাড়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। তবুও ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন,  কোনোভাবেই যাতে এ বাল্যবিয়ে না হতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

শিলা ইসলাম

×