ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

সুন্দরবনে আগুন, রাত নামায় পানি দেওয়া যায়নি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ০১:০৪, ২৩ মার্চ ২০২৫

সুন্দরবনে আগুন, রাত নামায় পানি দেওয়া যায়নি

ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায় লাগা আগুন থেকে থেকে জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (মাটি সরিয়ে নালা তৈরি) কাটা হয়েছে। তবে কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে পানি দেওয়া যায়নি। আলো না থাকায় রাতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সকালে আবার কাজ শুরু হবে। 

সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন বনের টেপার বিল এলাকায় ধোঁয়া দেখতে পান পাশের এলাকার বাসিন্দারা। পরে বন বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দারা একসঙ্গে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের ৫ টি ইউনিট। তবে দুর্গম ওই হওয়ায় আসপাশে পানির উৎস না থাকায় এবং জীবনের ঝুঁকি থাকায় সন্ধ্যার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বন থেকে বের হয়ে আসেন।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বন বিভাগের সঙ্গে শত শত স্থানীয় বাসিন্দা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে শুকনা পাতা ও মাটি সরিয়ে নালা তৈরি করে ফায়ার লাইনের কাজ করেন। সন্ধ্যা  ছয়টার দিকেও বনের বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ও ধোঁয়ার কু-লী দেখা যায়। তবে ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে যাতায়াত ও পানির পাইপ নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। বিকেলে বন বিভাগ ভোলা নদীতে নিজস্ব পাম্পমেশিন বসিয়ে পাইপ টানতে শুরু করে। 

ঘটনাস্থল ঘুরে আসা পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের আব্দুল গনি হাওলাদার ও বেল্লাল হোসেন বলেন, বনের বেশ ভেতরে আগুন লেগেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। গাছপালার মধ্যে হাঁটা যায় না। এখানে বনের মধ্যে ভালো ছিলাও (পায়ে হাঁটার পথ) নেই। গাছের কারণে কিছু জায়গা দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হয়। এর মধ্য দিয়ে পাইপ টানতেও কষ্ট হয়েছে।’

সরেজমিন থেকে ফিরে রাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য পান্না মিয়া বলেন, সকালে সুন্দরবনের টেপার বিল এলাকার ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পরে দুপুর থেকে স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। বেশ দুর্গম পথ। আশপাশে কোনো নদী-খাল নেই। তাই পানি নিতে দেরি হচ্ছে। আগুন যেন না ছাড়ায়, সে জন্য এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় নালা বা’ সরু পথ (ফায়ার লাইন) কাটা হয়েছে। সেখানে প্রচুর শুকনা পাতা, এটাই ভয়। 

স্থানীয় লোকজন বলছেন, আগুন লাগা এলাকাটিতে তেমন বড় গাছ নেই। অধিকাংশই বলা বা বলুইজাতীয় গাছ। এই গাছের শুকনা পাতার আস্তরণ রয়েছে মাটির ওপরে। ওই শুকনা পাতার কারণে আগুন থেকে থেকে ছড়াচ্ছে। রাতে বাতাস হলে আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। তবে তারা পানি ছিটাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শরণখোলা স্টেশনের কর্মকর্তা আফতাদ-ই-আলম বলেন, দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। আশা করা যায়, আগুন আর ছাড়াবে না। কোথাও ধোঁয়া আছে, কোথাও একটু একটু করে জ্বলছে। অর্ধেক পথ পর্যন্ত পাইপ টেনে নেওয়া গেছে। তবে পানি দেওয়া যায়নি। আলো না থাকায় রাতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। খুব ভোরে পাইপ টেনে পানি দেওয়া হবে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন উল্লেখ করে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। আগুন ততটা বেশি নয়, বেশি হলো ধোঁয়া। আগুন যেন আর না ছড়ায়, সে জন্য চারপাশ থেকে পাতা সরিয়ে সরু নালা কাটা হয়েছে।

আসিফ

আরো পড়ুন  

×