ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

খেয়া ও ফেরি ঘাটে নৈরাজ্য 

৯২ কোটি টাকা ব্যয় সেতুর তিন বছরের প্রকল্প আট বছরেও শেষ হয়নি!

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:২৮, ২৩ মার্চ ২০২৫

৯২ কোটি টাকা ব্যয় সেতুর তিন বছরের প্রকল্প আট বছরেও শেষ হয়নি!

ছবিঃ সংগৃহীত

বরিশাল দিনারেরপুল-লক্ষীপাশা-দুমকী জেলা আঞ্চলিক সড়কে বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ও চরাদী ইউনিয়নের গোমা পয়েন্টে রাঙ্গামাটি নদীর ওপর সেতু ও সড়ক বিভাগের অধীনে ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান এম খান গ্রুপ সেতুর নির্মাণ কাজ করছে।

নির্মাণাধীন গোমা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৭ সালে ৫৭ কোটি ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ৩ বছর মেয়াদের প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছিল। এ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০২০ সালের জুন মাসে। গত ৮ বছরে সেতু নির্মাণের মেয়াদ বারবার শেষ হলেও, এখন পর্যন্ত নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ ৪৪ ভাগ সম্পন্ন হলে তখন সেতুর উচ্চতা নিয়ে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের দফায় দফায় সভা এবং বিশেষজ্ঞ দলের পরিদর্শনের পর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতায় সেতুর সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সংশোধিত প্রকল্পে সেতুর নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। নদীপথ সচল রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি অনুযায়ী, সেতুর মাঝ বরাবর সর্বোচ্চ জোয়ারের সময় ১২ দশমিক ৪ মিটার উচ্চতা রেখে নতুন নকশা করা হয়। 

সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সেতুটি রাঙ্গামাটি নদীর ওপর ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রশস্ত দুই লেনে নির্মিত হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার।

সেতুটি নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফায় শেষ হলেও নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে সেটা এখনো অনিশ্চিত। সড়ক জনপথ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুটি চালু হবে। অথচ সেতুটি চালু হওয়া তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত সেতুটির মাঝখানের দুটি গার্ডারের নির্মাণ কাজ শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় বাকেরগঞ্জ, দুমকি, বাউফল তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। প্রতিদিন গোমা ফেরি ও খেয়া পারাপার হতে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে পথচারীদের। হাজারো মানুষ প্রতিদিন জেলা শহর বরিশালে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না টানিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে ইজারাদার। এমন পরিস্থিতিতে ফেরিঘাট ও খেয়াঘাটে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। খেয়া ও ফেরিঘাটে নির্ধারিত ভাড়া আদায়সহ দ্রুত সময়ের মধ্যে গোমা সেতুটি নির্মাণ করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার মাফুজ খান জনকণ্ঠকে জানান, নদীর মধ্যে দুটি পিলারের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নদীর মধ্যে দুই পিলারের গার্ডার নির্মাণে কংক্রিটের বদলে স্টিলের পাত ব্যবহার করা হবে। সেতুটির মাঝখানের অংশে স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ঈদের পরেই কাজ শুরু হবে। ৩০ জুনের মধ্যে সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব।   

বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হবে।  

অপরদিকে খেয়াঘাটের নৈরাজ্যের বিষয় বরিশাল জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল বলেন, খেয়া ঘাটের নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ইমরান

আরো পড়ুন  

×