ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

২শ পরিবারে হাসি ফুটাচ্ছেন বাবু 

আল মামুন, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২২ মার্চ ২০২৫

২শ পরিবারে হাসি ফুটাচ্ছেন বাবু 

জয়পুরহাটে আলুর চিপস তৈরি করে প্রায় ২শ পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন বাবু নামের এক উদ্যোক্তা। এরফলে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর পৌরসভার  শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামটি এখন চিপস'র গ্রাম নামেও পরিচিত লাভ করেছে।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়িতে কেউ আলু সেদ্ধ করছেন, আবার কেউ সেদ্ধ আলু ঝুরি-ঝুরি করে গোলাকার কাটছেন। এরপর কাটা আলুগুলো তুলসীগঙ্গা নদীর পাড়, বাঁধ, রাস্তা, পুকুরপাড়ে রোদে শুকাচ্ছেন।

মুলত বাবু  উদ্যোক্তার কাছ থেকে এক মণ আলু নিয়ে তা সেদ্ধ করে মেশিন কিংবা হাত দিয়ে কেটে রৌদে শুকাতে দেন, তারপর কিছু দিন রোদে শুকানোর পর সেই আলুর চিপসগুলো বাবুকে দিলে তিনি ৩০০ টাকা করে মজুরি দেন। এভাবেই বাবুর তত্ত্বাবধানে প্রায় ২শ টি পরিবার কাজ করে যাচ্ছে। এতে চিপস তৈরির সাথে যারা জড়িত তাদের জীবন একদিকে হয় হচ্ছে তেমনি বাবুও ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছেন। 

 ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল আলুর চিপস তৈরির কাজ করেন তারা। এ সময় গ্রামের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কারও যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। এটি তাদের সারা বছরের আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন।

আলুর চিপস তৈরির মাধ্যমে এসব পরিবারের অনেকেরই  অভাব দূর হয়েছে। হাতে তৈরি করা আলুর চিপস বা আলুর পাঁপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব চিপস রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আমেনা বিবি, আবুল কাশেমসহ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, তাদের গ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে ২শ টি পরিবার  আলুর চিপস তৈরি করে। মৌসুমি এ ব্যবসার আয় সারা বছর সংসার চলে। প্রতিদিন দেড় থেকে ২ হাজার মণ আলু সেদ্ধ করা হয়। এই চিপস তৈরি করতে একটু পরিশ্রম হয়। তবে আজ পর্যন্ত কেউই লোকসান করেননি। যেসব ব্যবসায়ীর পুঁজি বেশি, তারা বেশি করে আলু কিনে চিপস তৈরি করে সংরক্ষণ করেন। তারাই বেশি লাভ করেন।

তারা আরও বলেন, আলুর চিপস তৈরির জন্য এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আলু কিনতে হয়। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের স্বল্পসুদে ঋণ দিত, তাহলে তারা উপকৃত হতেন।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের আঃ জলিল  বলেন, ক্যাডিনাল জাতের আলু চিপসের কাজে ব্যবহার করা হয়। অন্য জাতের আলু দিয়ে চিপস তৈরি হলেও তেমন স্বাদ মেলে না। বাবু ভাই আলু কিনে আমাদেরকে দেন,  সেই আলুগুলো সেদ্ধ করার পর গোলাকার করে কেটে রোদে শুকিয়ে চিপস তৈরি করে বাবু ভাই কে দিলে তিনি মণ প্রতি ৩০০ টাকা করে আমাদেরকে দেন। 
বাবু মিয়া বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে মহাজনরা এসে আলুর চিপস নিয়ে যান। আবার আমরা নিজেরাও ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আলুর চিপস সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, এ কাজ করে অনেক পরিবারের উন্নতি হয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। আবার বাড়িঘরেরও উন্নতি হয়েছে। 

আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আলুর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে আলুচাষিরাও উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য পাবেন।

রাজু

×