ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসান, বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত কৃষক

আহমেদুজ্জামান(আলম) কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২২ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪৯, ২২ মার্চ ২০২৫

মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসান, বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত কৃষক

মৌলভীবাজারের শষ্যভান্ডার খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলায় শীতকালীল সবজির সরবরাহ বাড়ায় ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। 
হতাশা ব্যক্ত করে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন,প্রতিবছরই চাষাবাদ করি কমবেশি লাভও হয় কিন্তু এবারের মত ধরা আগে কখনো খাইনি, আমরা পারিবারিকভাবেই কৃষক,গত বছর ৭৫ শতক জমিতে কুমড়া চাষ করে ১০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। এবছর আমার এই জায়গায় ৫০ হাজার টাকা খরছ হয়েছে। বিক্রি করেছি ১ লক্ষ টাকার মতো। ক্ষেতে আরও লক্ষ টাকার কুমড়া আছে। কিন্তু এই লাভে কিভাবে চলবো। তাছাড়া একটি কুমড়া বাজারে বিক্রি করতে গেলে ২৫-৫০ টাকা দাম পাই না কিন্তু কিনতে গেলে ৭০-৮০ টাকার নিচে কেনা যায় না। কুমড়ার দাম এত কম যে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। আবার কুমড়া খেলে গরুর ঠান্ডা লেগে যায়। তাই জমিতেই কুমড়া সহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের  আরেক কৃষক মুকেদ মিয়া বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে, দামও ভালো পেতাম। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে অনেক জাতের সবজি চাষাবাদ করেছি। কিন্তু এ বছর নানান জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও লাভের কোটা শূন্যের ঘরে। ভয়াবহ বন্যার কারণে আমাদের গতবারের ফলন খারাপ হয়েছে। এবার বাজারে আমাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য দাম না পাওয়ায় সবজি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
কৃষক ও পাইকারি বিক্রেতা ফটিক মিয়া বলেন, আমরা সবাই কৃষক। আমাদের কৃষি পণ্য সারাদেশে যায়। কিন্তু প্রতিদিন আমরা লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি, আমরা মিষ্টি কুমড়া আড়তে বিক্রি করতে গেলে ৩০-৬০ টাকার বেশি দাম পাই না। আমরা চাই কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাক। সরকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। সার ও কীটনাশকের দামও হু হু করে বাড়তেসে। আমাদের মরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী ছনর মিয়া  বলেন, বাজারে দাম নেই, পাইকাররাও আসছে না। তাই জমিতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। এসব সবজি বিক্রি করে আমাদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচও উঠছে না। বিশেষ করে ঋণ নিয়ে সবজি আবাদকারী কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পারুয়াবিলের কৃষকরা লাউ, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, শসা ও মরিচসহ শীতকালীন সবজি আবাদ করছেন। স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশা নিয়ে রোপণ করা শীতের সবজি এখন লোকসানে ফেলেছে কৃষকদের।
কমলগঞ্জ উপজেলাকে শস্যভান্ডার বলা হলেও বিগত ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির পর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানে রয়েছেন কৃষক। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।কৃষকসহ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবী হিমাগার স্থাপনের, যদিও এ দাবী এখনো আলোর মূখ দেখেনি।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, কমলগঞ্জে উপজেলায় এবছর ১ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির ফলন হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার মাধবপুর, আদমপুর, রানীবাজার, ইসলামপুর এলাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কৃষক হয়তো মূল্য কম পাচ্ছেন। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো, যেন কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তাদেরও ক্ষতি না হয়।
 

কানন

×