ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড়ে যেন পা ফেলার জায়গা নেই নিউমার্কেটে!

আল জুবায়ের

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ২১ মার্চ ২০২৫

ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড়ে যেন পা ফেলার জায়গা নেই নিউমার্কেটে!

ছবিঃ সংগৃহীত

ঈদের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। রোজার মাঝামাঝি থেকে ভিড় বাড়লেও আজ শুক্রবার (২১ মার্চ) নিউমার্কেট এলাকায় ভিড় বেড়েছে কয়েকগুন, উপচেপড়া ভিড়ে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শপিংমলগুলো থেকে শুরু করে ভাসমান ফুটপাত সব জায়গায় ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হতে দেখা যায়। আর ছুটির  দিন হওয়ায় ভিড় আরও বেশি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। ক্রেতাদের এমন ভিড়ে বিক্রেতাদেরও চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। 

শুধু নিউমার্কেটই নয় আশপাশের এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টারসহ আশেপাশে কয়েক হাজার বিপণি-বিতান রয়েছে, যার অধিকাংশই শাড়ি-কাপড়, থ্রি পিস, পায়জামা-পাঞ্জাবি, ছোটদের পোশাক, প্রসাধনীর পাইকারি ও খুচরা দোকান। মূলত, রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে রাজধানীতে ধীরে ধীরে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। আর ঈদকে কেন্দ্র করে এসব এলাকার ফ্যাশন হাউজগুলো সেজেছে নানান বাহারি পোশাকে। 

ঈদে প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনতে শাড়ি, থ্রি-পিস, বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, পায়জামা এবং টিশার্টসহ অন্যান্য পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নারী, পুরুষ এবং শিশুদের জন্য নানান ডিজাইন ও মানের জামাকাপড়। শপিংমল ও মার্কেটে শাড়ি, কুর্তা, পাঞ্জাবি-পায়জামা, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ওয়ান পিস পাওয়া যাচ্ছে। আর বিভিন্ন দোকানে নারী ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যাদের অধিকাংশই নতুন পোশাক, গহনা, মেকআপ আইটেম এবং অন্যান্য উপহার সামগ্রী কিনছেন।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে শাড়ি কিনতে এসেছেন লাবনী আক্তার ও তার পরিবার। তিনি বলেন, শাড়ির জন্য এই মার্কেটটিকে আমার কাছে সেরা মনে হয়। কেননা এখানে সব ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়। নিজের জন্য নিয়েছি, মেয়ে আর ছেলের বউ এর জন্য শাড়ি কিনেছি। আরও দেখছি। দাম প্রতিবারের ন্যায় এবারও একটু বেশি। ঈদের সময় তো একটু বেশি হবেই।

আজমপুর থেকে শপিং করতে আসা শফিক ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহে গ্রামের বাড়ি চলে যাবো। এজন্য কাপড় কিনতে আসা ৷ পরিবারের লোকজনের জন্য কিনে নিয়ে যাবো ৷ এখানে একসঙ্গে অনেক দোকান থাকায় পছন্দমতো কেনাকাটা করা যায়।

জুলফিকার নামে আরেক ক্রেতা জানান, পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি, আর বাকি কেনাকাটাগুলো করতে এসেছি। সাধারণত ঈদের সময় নতুন কাপড় কিনি। নিউমার্কেটের দাম একটু কম, তাই এখানে এসেছি। তবে এত ভিড় আগে কখনো দেখিনি।

চাঁদনী চক মার্কেটের জামাল ফেব্রিক্স থেকে জানান, এবার ঈদে নির্দিষ্ট কোনো জামার প্রতি তীব্র চাহিদা না থাকলেও পাকিস্তানি ব্রান্ড আগানুর, সাদা বাহার, তাওয়াক্কুল, বিন সাইদ, অরগান্জা মসলিন ও ইন্ডিয়ান ড্রেসের চাহিদা বেশি।

এ ছাড়া অনেক ক্রেতা গরম কালকে সামনে রেখে জাঁকজমকপূর্ণ ভারী পোশাকের চেয়ে সুতি পোশাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন। মার্কেটগুলোতে থ্রি-পিস ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৷ শাড়ি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৯ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

বরাবরের মতো এবারও ঈদ বাজারে নারী ও শিশুদের পোশাকের ধরণ ও চাহিদা বেশি। তবে নিউমার্কেটের তৃতীয় তলা, নুরজাহান মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা এবং সায়েন্স ল্যাব ও তার আশেপাশের এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট ও বাহারি পাঞ্জাবি-পায়জামা। জুয়েলারি, কসমেটিক্স ও ফুটপাতের দোকানগুলোতেও দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়।

নূরজাহান ম্যানশন মার্কেটের বিক্রেতা রাকিব সরকার বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ঈদে বিক্রি ভালো হচ্ছে, কিন্তু ভিড় একটু বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে ক্রেতাদের কোনো সমস্যা না হয়।

নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসেন উদ্দীন জানান, ভিড় নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং কোন ধরনের উশৃঙ্খলা বা অপরাধ যেন না ঘটে, সেজন্য কঠোর নজরদারি চলছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজর রাখছেন।
 

ইমরান

×