
১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুকচিড়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ
যেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের সারি, রোদের সঙ্গে শুভ্র মেঘের নিত্য লুকোচুরি খেলা। সেখানে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসে আজানের সুমধুর ধ্বনি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে সবুজ পল্লব আর নিসর্গের বুকচিড়ে সপ্রতিভ দাঁড়িয়ে আছে একটি মসজিদ। বাংলাদেশে যত মসজিদ রয়েছে তার মধ্যে সবচে উঁচু স্থানে নির্মিত এই মসজিদটির নাম ‘দারুস সালাম জামে মসজিদ’। যার অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালির রুইলুই পাড়ায়। সেনাবাহিনীর দানকৃত এক একর ভূমির ওপর নির্মিত এই মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৮ টাকা। এতে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। চারতলা বিশিষ্ট ভিতের ওপর দণ্ডায়মান দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি উচ্চতায় ২২ ফুট। এতে রয়েছে চারটি গম্বুজ ও একটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদটির পূর্ব-পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ৬৫ ফুট, উত্তর-দক্ষিণের প্রস্থ ৮১ ফুট এবং সামগ্রিক আয়তন ৫ হাজার ২৬৫ বর্গফুট। সৌন্দর্যের কুঞ্জ-কাঠিতে ভরা এই মসজিদটি নির্মাণে ২০২০ সালে যৌথভাবে উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সেই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই পাড়ায় হ্যালিপ্যাডের পাশে মসজিদটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক চট্টগ্রাম ডিভিশনের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান। এরপর নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগে ঠিক দুই বছর। বর্তমানে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে। দারুস সালাম জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মনিরুজ্জামান জানান, ‘২০২২ সালের পহেলা রমজানের এশা এবং খতম তারাবির নামাজের মাধ্যমে এই মসজিদে সালাত আদায়ের সূচনা হয়। বর্তমানে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত জামায়াতের পাশাপাশি জুমা এবং খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয় এখানে। তারাবির জন্য গত দুই বছরের মতো এবারও দুইজন হাফেজ নিয়োগ করা হয়েছে। এসব জামাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বহু পর্যটক অংশ নেয়।’ সাজেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। আর বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ থেকে ২০ গুণ। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পর্যটক।
দারুস সালাম মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক যুবরাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন, স্থানীয় কটেজ-রিসোর্ট-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের দান-অনুদানে এই মসজিদের সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। উঁচু পাহাড়ের কারণে সাজেকে পানি পাওয়া যায় না। ফলে মসজিদের অজুসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য সকল পানি কিনে ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন এই মসজিদে গড়ে ৫ হাজার লিটার পানি লাগে। আর প্রতি লিটার পানিতে ১ টাকা করে কেবল দেনিক ৫ হাজার টাকা খরচ হয় পানি বাবদ। এ ছাড়া আরও আনুষঙ্গিক অনেক খরচ রয়েছে। তবে ব্যয়বহুল হলেও সবার সহযোগিতা নিয়ে এই মসজিদে নিয়মিত সালাত আদায় হচ্ছে।’