ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১

কালেভদ্রে পুতুলনাচ দেখা যায়! হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি ঐতিহ্য

শরিফুল রোমান, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২১ মার্চ ২০২৫

কালেভদ্রে পুতুলনাচ দেখা যায়! হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি ঐতিহ্য

ছবি: সংগৃহীত

একসময় দেশজোড়া খ্যাতি ছিল পুতুল নাচের। বর্তমানে বিপন্ন অবস্থা পুতুলনাচের। কোনো উৎসব বা মেলার আয়োজন হলে সেখানে কালেভদ্রে পুতুলনাচ দেখা যায়।

পেশাগতভাবে কেউ আর শুধুই পুতুলনাচের সঙ্গে যুক্ত নেই। দলের সদস্যরা সারা বছর বিভিন্ন কাজ করেন। কোথাও কখনো নাচের বায়না পেলে দলের লোকদের ডাক দিয়ে তাঁরা প্রদর্শনী করে আসেন। সে কারণে নিয়মিত চর্চাও নেই, নতুন ধরনের পুতুল তৈরিতেও আগ্রহ নেই।

'পুতুলনাচ’ বলা হলেও আগে এসব পুতুল তৈরি করা হতো পৌরাণিক কাহিনির চরিত্র অনুসারে এবং অভিনয় হতো রাধা–কৃষ্ণের লীলা, সীতাহরণ, বেহুলার ভাসান এসব। হিন্দু–মুসলিম সব ধর্মের লোকে বহুশ্রুত এসব লোককাহিনির পুতুলনাট্যাভিনয় দেখে আনন্দ উপভোগ করতেন। ভারতভাগের পরে পুতুলনাচের অধিকাংশ হিন্দু দলপতিই ভারতে চলে যান। তাঁদের রেখে যাওয়া পুতুলগুলো নিয়েই দল চালানোর চেষ্ট করেন স্থানীয় মুসলিম শিল্পীরা।

পাকিস্তান আমলে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ায় পৌরাণিক কাহিনিগুলোর অভিনয়ও ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়। অভিনয়ের বদলে পুতুলের নাচানাচিই প্রধান হয়ে ওঠে। পুতুলনাট্য ক্রমান্বয়ে পুতুলনাচে পর্যবসিত হয়। বহুবার দেখা পুরোনো পুতুলের একই ধরনের নাচ দেখতে দেখতে দর্শকেরাও এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

রুদ্র কমল জানান, ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচের শিল্পীরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন চিত্রনাট্য তৈরি করতে পারেননি, পুতুল সঞ্চালনায়ও নতুনত্ব আনতে পারেননি। তাঁদের বাচনিক ত্রুটি, উপস্থাপনায় অনেক সময় সুরুচির অনুপস্থিতি, অতি নিম্নমানের মঞ্চসজ্জা এসব মিলিয়েই ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

আমাদের দেশীয় লোক পুতুল নাচকে শিক্ষণীয় বিষয়কে পরিবেশনার মাধ্যমে তুলে ধরতো, সেটাকে যদি আধুনিক ধারার সাথে মিলিয়ে নতুন শিক্ষণীয় গল্প পরিবেশন করা যায় তাহলে পুতুল নাচের চর্চা আরো অগ্রসর হতে পারবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে পুতুল নাচের ধরণ কেমন হওয়া উচিত সেটা নিয়েও আমাদের চিন্তা ভাবনা করা দরকার।

মায়মুনা

×