
ছবিঃ জমিদার মহেন্দ্র রায় চৌধুরী ও রাজেন্দ্র রায় চৌধুরির স্মৃতি বিজরিত কাছারি বাড়ি
কালের সাক্ষী হয়ে আছে বাউফলের কাছারি বাড়ি। প্রায় দুইশ’ বছরের পূর্বে জমিদার মহেন্দ্র রায় চৌধুরী ও রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী এ বাড়িটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এ বাড়িটি উপজেলা ভুমি অফিস হিসাবে পরিচিতি।
জনশ্রুতি আছে, বরিশাল, ফরিদপুর ও খুলনার কিছু অংশ নিয়ে চন্দ্রদ্বীপ নামের একটি রাজ্য গড়ে উঠে। আর সেই রাজ্যের রাজধানী ছিল তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের কচুয়া । ওই সময় ফরিদপুর জেলার সদরপুর বাইশরশি থেকে দক্ষিণা রঞ্জন রায় স্ব-পরিবারে বাণিজ্য করতে এই চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যে আসেন। তিনি স্বাচ্ছন্দে দীর্ঘ দিন এখানে বাণিজ্য করেন। তাঁর মৃত্যুর পর দুই ছেলে- মহেন্দ্র রায় ও রাজেন্দ্র রায় মিলে এখানে বাণিজ্য শুরু করেন।
এক পর্যায়ে তারা দুই ভাই এ রাজ্যে বিপুল সংখ্যক জমি ক্রয় করে, জমিদারীত্ব লাভ করেন। আর এই জমিদারীত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নিজ এলাকা থেকে কিছু সংখ্যক লোক এখানে নিয়ে আসেন। প্রজাদের কাছ থেকে তারা খাঁজনা আাদায় করতেন। আর এ খাঁজনা আদায়ের জন্য এলাকা বিশেষ নির্মাণ করা হয় কাছারি ঘর ।
প্রজারা নিজ নিজ এলাকার কাছারি ঘরে গিয়ে এ খাঁজনা দিয়ে আসতেন। এ কাছারি ঘরগুলোর মূল কার্যক্রম পরিচালিত হতো মহেন্দ্র রায় চৌধুরী ও রাজেন্দ্র রায় চৌধুরীর এ বাড়ি থেকেই। তাই একসময় এই বাড়িটির নামও হয়ে যায় কাছারি বাড়ি।
বাউফল বাজারের দক্ষিণ পাশে এ জমিদার বাড়ি বা কাছারি বাড়িটি অবস্থিত। বর্তমানে এই বাড়িটি বাউফল উপজেলা ভূমি অফিস এবং বাউফল ইউনিয়নের তহসিল অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বাউফল ইউনিয়ন তহসিল অফিস থেকে এখনও খাজনা নেয়া হয়। ওই ইউনিয়নের লোকজন এ অফিসে এসে খাঁজনা দিয়ে যান। সেই জমিদারীত্ব না থাকলেও জমিদারদের সেই খাঁজনা প্রথা এ বাড়িতে এখনও বহাল রয়েছে।
বাউফল মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের জে এল নং ৮৭ দাগ নং ১১২০ ও ১১২১ তে ১১.৯৭ একর জমির উপর এ বাড়িটি অবস্থিত। ভূমি অফিসের অধিকাংশ অফিস ঘরই জমিদারী এ স্টেটের পুরাতন দালানে পরিচালিত হচ্ছে। নানা শৈল্পিক কারুকার্জে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ছোট সাইজের ইট আর সুরকি ব্যবহার করে এ বাড়িতে নির্মাণ করা হয় দুইটি দালান । এর একটি দালান হচ্ছে দক্ষিণ পাশে। আর অপর বাড়িটি হচ্ছে পশ্চিম পাশে। দালান দুইটির সামনে দুইটি করে ৬ টি জোড়া গম্মুজ রয়েছে। দক্ষিণ পাশের দালানের সামনে স্থাপিত হয়েছে দুটি হাতির মাথা ।
এ দালনটির ভিতরে রয়েছে ৪ টি রুম। দালানটি বর্তমানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমির) বাস ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হতো। আর পশ্চিম পাশের দালানের রয়েছে ৫টি কক্ষ। এ দালান দুটি সামনে খোলা যায়গায় নির্মাণ করা হয় টিনের ৮ চালা বিশিষ্ট উচু নাটঘর। এ নাটঘরে যাত্রা-পালাসহ বিভিন্ন ধরনের নাটক হতো। বাড়ির সামনে বসে জমিদার তার পরিবারের লোকজন নিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেতন।
এ জমিদার বাড়ির নিরাপত্তার স্বার্থে চার পাশে রয়েছে উচু দেয়াল। রয়েছে ২ টি পুকুর। জমিদার বাড়ীর উত্তর পাশে পুকুরটি পানি ছিল রিজার্ভ। এ পুকুরের পানি প্রজারা কেউ ব্যবহার করত না। শুধু জমিদার বাড়ির লোকজন ব্যবহার করতেন।
কথিত আছে, ১৮৬৭ খ্রিঃ কলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমাধীন বাউফল থানা হিসেবে অর্ন্তভূক্ত হওয়ার পর জমিদার মহেন্দ্র রায় ও রাজেন্দ্র রায় এ জমিদারী ছেড়ে চলে যান। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ বাড়িটি সরকারের দখলে চলে যায়।
ইমরান