ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

কোকিলের ডাক হৃদয়ে বসন্তের আগমনী বার্তা শোনায়

শরিফুল রোমান, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ 

প্রকাশিত: ০০:১২, ২১ মার্চ ২০২৫

কোকিলের ডাক হৃদয়ে বসন্তের আগমনী বার্তা শোনায়

ছবিঃ সংগৃহীত

কোকিলের ডাক হৃদয়ে বসন্তের আগমনী বার্তা শোনায়। যেমন পলাশ, শিমুল ফুল ফুটে বসন্তের আগমনী বার্তা দেয় আমাদের চোখে। কোকিলের ডাকে শিল্প খুঁজে পান কবি-সাহিত্যিকেরা। 

কোকিল বাংলাদেশের খুবই পরিচিত পাখি। কোকিল বাংলাদেশ ছাড়াও সমগ্র ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মায়ানমার ইত্যাদি দেশেও পাওয়া যায়। কোকিলের মিষ্টি ডাক চেনেনা কিংবা শুনেনি এমন মানুষ পাওয়াই ভার। তবে মেয়ে কোকিল ডাকে না শুধু পুরুষ কোকিলই ডাকে। বাহ্যিক সৌন্দর্যেও পুরুষ ও স্ত্রী কোকিলের মাঝে অনেক পার্থক্য। মেয়ে কোকিল কখনো উচ্চ স্বরে ডাকে না। সাধারণত প্রজনন মৌসুম ছাড়া কোকিল ডাকে না। 

কোকিল আকারে প্রায় ৪৩ সে.মি. যা অনেকটা পাতি কাকের মতো। পুরুষ কোকিলের গায়ের রঙ কুচকুচে কালো এবং চোখের রঙ হয় লাল। অন্যদিকে মেয়ে কোকিলের গায়ের রঙ হয় খয়েরির মধ্যে সাদা ফোঁটা ফোঁটা দাগ।

কোকিল কিন্তু বাসা বানাতে জানে না। ডিম পাড়ে অন্য পাখির বাসায়। কথাটা ছোটবেলায় বড়দের কাছ থেকে শুনেছি। প্রজননের সময় এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। ছানাদের খাওয়া ও লালন-পালন হয়ে থাকে অন্য পাখিদের মাধ্যমে।

ডিমের সঙ্গে রং মিলবে এমন পাখির বাসাতেই ডিম পাড়ে কোকিল। যাতে অন্য পাখি ভাবে এটা তারই ডিম। কোকিল অন্য পাখির বাসায় সাধারণত একটি ডিম পাড়ে। সে বাসায় যদি তিনটি ডিম থাকে তাহলে একটি ডিম সে বাসা থেকে ফেলে দেয়, কিংবা খেয়ে ফেলে। পোষক পাখি তখন তার ডিম গুণে দেখে যে তিনটি ডিমই আছে। আমাদের দেশের কোকিলরা সাধারণত কাক, শালিক, ফুটকি, ছাতারে, ফিঙের বাসায় ডিম পাড়ে।

অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ার জন্য একেক ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে থাকে। এ জন্য তারা পোষক পাখির প্রতিরোধের দিকগুলোর দুর্বলতা রপ্ত করে নেয়। মেয়ে কোকিল একটু নিশ্চুপ ও ঠান্ডা প্রকৃতির হয়। ডিম পাড়ার সময় হলেই সতর্ক থাকে সে। পোষক পাখি কোনো কারণে বাসা ছেড়ে খাবার খেতে গেলে দ্রুত চুপি চুপি গিয়ে ডিম পেড়ে আসে মেয়ে কোকিল। আবার কখনো পুরুষ কোকিল প্রথমে পোষক পাখিকে বিরক্ত করতে থাকে। তখন মা পাখি বাসা ছেড়ে তাকে তাড়াতে যায়। আর সেই ফাঁকে মেয়ে কোকিল ডিম পেড়ে পগারপার হয়। কোকিল ডিম পাড়তে সময় নেয় খুব কম।

পাখিদের মধ্যে কোকিলের ডিম যেকোনো পাখির ডিমের চেয়ে আগে ফোটে। ছানাও বাড়ে দ্রুত। তাই কোকিলের ছানা একটু বড় হলেই বাসা থেকে ফেলে দেয় বা পা দিয়ে ভেঙে ফেলে পোষক পাখির ডিম। পোষক পাখির ডিম থেকে ছানা ফুটলেও সে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের কোকিল ছানার সঙ্গে শক্তিতে পেরে ওঠে না। কোকিলের ছানা তাকে বাসা থেকে ফেলে দেয়।

কোকিল সাধারণত ছোট পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। তাই কোকিলের ছানা কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো বাসার জায়গা দখলে নেয়। কোকিল ছানারা খাবার পাওয়ার জন্য বেশ ডাকাডাকি করে এবং পোষক মা ও বাবা পাখিকে দিনভর খাবার খাওয়াতে বাধ্য করে। অন্য পাখি যখন বুঝতে পারে এটি তার ছানা নয়, তত দিনে নিজের খাদ্য নিজে চিনে ফেলে কোকিল-ছানা।

ইমরান

×