
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বের সূচনা করেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার
বসন্ত সকালে সাজ সাজ রব পড়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। চৈত্রের মেঘলা দিনে সেথায় বিরাজ করছিল উৎসবের আগমনী বারতা। ফটক পেরিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য সবুজÑশ্যামল আঙিনায় পৌঁছুতেই নজরে পড়ে লম্বা এক টেবিল। লবিতে দ-ায়মান টেবিলের বাঁপাশে বিছিয়ে রাখা সবুজ পাতার ওপর শোভা পাচ্ছিল জবাসহ লাল-নীল, হলদে রঙের ফুল।
অনুষদেরই বাগান থেকে সংগৃহীত এই পুষ্পগুচ্ছ পেরিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় টেবিলে শায়িত রং-রেখা ও অবয়বহীন ক্যানভাসের পানে। সকাল পেরুনো দুপুরে সেই চিত্রপটের সামনে এসে হাজির হন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার। পেন্সিলের আশ্রয়ে সাদা ক্যানভাসে সুচারু রেখার টানে তিনি মেলে ধরেন বিষয়ের অবয়ব। এর পর স্কেচের চারপাশজুড়ে রঙের ওপর রং চাপিয়ে পূর্ণতার পথে ধাবিত হয় চিত্রপটটি।
এভাবেই বৃহস্পতিবার সকাল গড়ানো দুপুরে এই চিত্রকরের চিত্রিত ছবির মাধ্যমে সূচনা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। এই চিত্রকর্মটির বিক্রীত অর্থ যুক্ত হবে নববর্ষ উদ্যাপনের সর্বোচ্চ রং ছড়ানো আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল গঠনে। সেই সুবাদে শুরু হলো চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক এ শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্ব।
শহর ঢাকার নববর্ষের আবাহনের সবচেয়ে রঙ্গিলা আয়োজনটির সূচনালগ্নে উপস্থিত ছিলেন অনুষদের শিক্ষক থেকে চারুশিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রার প্রাথমিক কর্মশালার এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ চঞ্চল, অধ্যাপক জামাল আহমেদ, অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
কর্মশালা শুরুর পর সরাচিত্র আঁকতে শুরু করেন চারুশিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে নির্মিত হবে নানা অবয়বের মুখোশ থেকে পুতুল। নানা বিষয়ের ছবি আঁকবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেসব শিল্পকর্ম বিক্রির অর্থ যুক্ত হবে শোভযাত্রার তহবিলে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে পয়লা বৈশাখে চারুকলা থেকে বের হওয়া রাজপথ রাঙানো শোভাযাত্রার মূল শিল্প-কাঠামোগুলো। এখনো পর্যন্ত শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়নি।
এবার বলি পবিত্র মাহে রমজানের কথা। সেই সুবাদে বদলে গেছে শহর ঢাকার দিনরাত্রির গল্প।
পরিবর্তন ঘটেছে জীবনযাত্রা থেকে জীবনাচরণে। এগিয়ে গেছে ব্যাংক থেকে অফিস-আদালতের কর্মকা- শুরুর সময়সূচি। একইভাবে পরিবর্তিত হয়ে এগিয়ে এসেছে অফিস ছুটির সময়। এমন বাস্তবতায় বেলা তিনটার পর থেকেই রাজধানীর সড়কে দৃশ্যমান হচ্ছে যানজট। অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ সারাদিন রোজা রেখে যে করেই হোক সন্ধ্যার আগে ফিরে যাচ্ছেন আপন গৃহে।
এর পর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শামিল হচ্ছেন বাহারি খাবারের পদে সাজানো ইফতারির টেবিলে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে এখন শহরবাসীকে হাতছানি দিচ্ছে রকমারি পোশাক, অংলকারসহ নানা পণ্যে ভরপুর বিভিন্ন বিপণি বিতান কিংবা মার্কেটসমূহ। কারণ, ক্রমশ এগিয়ে আসছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ইদুল ফিতর। এমন বাস্তবতায় জমে উঠেছে ইদকেন্দ্রিক কেনাকাটার পালা। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত অবধি নগরবাসী চষে বেড়াচ্ছেন ছোট-বড় শপিং মল থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্যাশন হাউসে। যার যার সাধ্য অনুযায়ী সংগ্রহ করছেন পছন্দসই পোশাক।
সেই প্রেক্ষাপটে সীমিত আয়ের নি¤œবিত্ত শ্রেণির মানুষও শামিল হয়েছেন উৎসবের আগমনী আবহে। ঢাকার চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ মার্কেট হয়ে তাদের গন্তব্য। কী নেই সড়কের ধারের এসব দোকানে! শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা থেকে জুতাসই-সবটাই সাশ্রয়ী মূল্যে মিলছে ফুটপাতে সাজিয়ে বসা পসরায়।
ইদের কেনাকাটার বলতে গেলে সহজাতভাবেই চলে আসে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের কথা। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই মার্কেটের প্রতি রয়েছে রুচিশীল মধ্যবিত্তের বিশেষ টান। কারণটি হচ্ছে বই থেকে পোশাকের মার্কেটে পরিণত হওয়া এই প্রাঙ্গণ ঘিরে রয়েছে শিল্প ও সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারণা। সময়ের ¯্রােতধারায় এখানে কমেছে বইয়ের দোকান, বেড়েছে পোশাকের বিপনি বিতান।
এখানকার অধিকাংশ দোকানের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে দেশজ সংস্কৃতির সংযোগ। ফলশ্রুতিতে এটি পরিণত হয়েছে আপন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনুসারী ফ্যাশন সচেতন মানুষের পছন্দের মার্কেটে। বিশেষ করে ভিন্নধর্মী টি-শার্ট থেকে ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ কিংবা পাঞ্জাবির জন্য এখানে রয়েছে তরুণ-তরুণী আনাগোনা। আর ঈদ উপলক্ষে দেশীয় কাপড়ের সঙ্গে এখানকা কিছু ফ্যাশন হাউউজে মিলছে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি পোশাকও।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে সব শ্রেণীর ক্রেতাকে কাছে টানছে আজিজ সুপার মার্কেট। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল অবধি আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেলো সেই চিত্র। প্রতিটি দোকানে রয়েছে কম-বেশি ক্রেতার ভিড়। এসব দোকানে ঢুঁ দিলে চোখে পড়ে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিক এবং রঙ ও ঋতুবৈচিত্র্যের সাক্ষ্যবহ রকমারি পোশাক। সেসব কাপড়ে রয়েছে সৃজনশীলতার ছোঁয়া। কথা হয় রুচিশীল পোশাকের সন্ধানে আজিজ মার্কেটে ঘোরা ফারহান ইসলাম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে।
আলাপচারিতায় এই চাকরিজীবী বলেন, তুলনামূলক কম দামে দেশজ ঐতিহ্যের অনুষঙ্গময় পোশাকের টানেই এখানে আসা হয়। এখানকার পোশাক সংগ্রহে সাধের সঙ্গে সাধ্যের সামঞ্জস্য মেলে। এর বাইরে পোশাক ছাড়াও প্রিয়জনকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু পাওয়া যায়।
দেশজ সংস্কৃতির স্পর্শময় আজিজের উল্লেখযোগ্য পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ঐতিহ্য, ইজি, নিত্যউপহার, স্বপ্নবাজ, বাংলার মেলা, লোকজ, মেঘ, প্রচ্ছদ, নহলী, সুঁইসুতা, ঐশী, বৃত্ত, নন্দন কুটির, আতশী, টেক্কা, বাংলার রং, ১৯৭১, তারা মার্কা, বাঙ্গাল, নক্ষত্র, মেঠোপথ, ক্যানভাস, বসন, সারাবেলা, চরকি, ষড়ঋতু, ব্যতিক্রম, ফেরিঅলা, যোগী, কে-ক্রাফট, রঙ, সাদাকালো, বিবিয়ানা, নক্ষত্র, দেশাল, গাঁওগেরাম, মেঠোপথ প্রভৃতি।