গাজীপুরে বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ঈদ বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ঈদের ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি, সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম)সহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে মারধর করে। শ্রমিকদের হামলায় আহত পাঁচ কর্মকর্তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নারীসহ চার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মহানগরীর শহীদ রওশন সড়কের চান্দনা এলাকায় অবস্থিত শফি প্রসেসিং গার্মেন্টসে এ ঘটনা ঘটে।
আহত কর্মকর্তারা:
১. মিজানুর করিম – জিএম (উৎপাদন)
২. মাজহারুল ইসলাম – ম্যানেজার (প্রশাসন)
৩. চন্দন কুমার সূত্রধর – জিএম (অর্থ)
৪. রফিকুল ইসলাম – এজিএম
৫. আনিসুর রহমান – সিকিউরিটি ইনচার্জ
আটককৃত শ্রমিকরা:
১. সাবিনা (২০)
২. মো. রিপন (২২)
৩. আকলাবুর রহমান (৩০)
৪. মাসুদ রানা (২৬)
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শফি প্রসেসিং গার্মেন্টসে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঈদ বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। এছাড়া শ্রমিকদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের অভিযোগও ছিল। শ্রমিকদের দাবি, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ন্যায্য মজুরি কমিয়ে দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রমিকরা তাদের দাবিগুলো নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পাঁচ কর্মকর্তাকে মারধর করে। পরে তারা কারখানার বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে এবং সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে।
এ সময় শ্রমিকরা কারখানার ভেতর থেকে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। বিকেল পর্যন্ত তারা কাউকে কারখানায় প্রবেশ বা বের হতে দেয়নি। খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে শ্রমিকদের দিয়ে গেটের তালা খুলিয়ে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি কায়সার আহমদ বলেন, "শফি প্রসেসিং গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভের সময় পাঁচ কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে কর্মকর্তাদের ওপর হামলা এবং সড়ক অবরোধের ঘটনায় জড়িত চার শ্রমিককে সনাক্ত করে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নুসরাত
