ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

মৌসুমি ফল বাঙ্গি

এবার প্রচুর ফলন ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশি

শামীম রায়হান

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ১৯ মার্চ ২০২৫

এবার প্রচুর ফলন ভালো দাম পেয়ে কৃষক খুশি

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এবার বাঙ্গির ফলন ভালো হয়েছে

এক সময় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা বাঙ্গি আবাদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। উপজেলাজুড়েই ছিল বাঙ্গির ব্যাপক ফলন। এখন আর নেই সেই রমরমা অবস্থা। কিন্তু চাহিদা বাড়ায় আবার বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। এখন চলছে বাঙ্গির ভরা মৌসুম। মৌসুমের এই সময় বাঙ্গি চাষি ও পাইকাররা পার করেন ব্যস্ত সময়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখান থেকে বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। বাজারেও ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং কাক্সিক্ষত মূল্য পেয়ে খুশি দাউদকান্দির কৃষকরা।
বাঙ্গির দাম নিয়ে পাইকারদের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের দাবি দাম অনেকটাই বেশি। অবশ্য রমজান মাস উপলক্ষে চাহিদা বেশি। তার প্রভাবে কৃষক পর্যায়ে দাম বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তারা। কিন্তু দাম নিয়ে পাইকারদের দাবি মানতে নারাজ কৃষক। তারা বলেন, উৎপাদন ব্যয়- ওষুধ ও শ্রমিক মজুরি মিলিয়ে তাদের খরচ অনেক বেশি। তাই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বাঙ্গির দাম ঠিকই আছে। 
সরেজমিনে উপজেলার ভেলানগরে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে বাঙ্গি কিনতে আসা ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কৃষকরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। অনেক পাইকার জমিতে নেমে পছন্দ করে বাঙ্গি সংগ্রহ করছেন। বর্তমান বাজার দরে একশ বাঙ্গি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কানিপ্রতি আবাদে খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। সঙ্গে আছে বাঙ্গির রোগ-বালাই প্রতিরোধে কীটনাশক ও শ্রমিক মজুরি। তারপরও মোটামুটি ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক। 
স্থানীয় কৃষক মজিদ আলী জানান, এখানকার অনেক কৃষকই বংশ পরম্পরায় বাঙ্গির আবাদে জড়িত। জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৪ মাস থাকে বাঙ্গির মৌসুম। এখন রমজান মাস, রোজাদারদের মধ্যে ইফতারিতে বাঙ্গি খুবই জনপ্রিয়। তিনি আরও বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা জমিতে এসে নিজেদের পছন্দমতো বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান। আবদুল হক নামে আরেক কৃষক বলেন, এবার আমি দুই কানি জমিতে বাঙ্গির আবাদ করেছি।

গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা কম। প্রথমদিকে দাম ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা ছিল। বর্তমানে দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তাই আমি আপাতত জমি থেকে বাঙ্গি উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। তার প্রত্যাশা দাম আরও বাড়বে।
মহরম মিয়া নামে অন্য এক কৃষক বলেন, যদি সব ঠিক থাকে তাহলে কানিপ্রতি আনুমানিক বিক্রি হতে পারে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। যদি বাজারে আরও ভালো দাম থাকে তাহলে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হবে আশা করছি।
কৃষকের প্রত্যাশা, বাজারে বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ভালো মুনাফা হবে তাদের। কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা যায় পাইকারদের মধ্যে। নারায়ণগঞ্জ থেকে বাঙ্গি নিতে এসেছেন রমজান আলী নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বিভিন্ন জায়গা ঘুরে কৃষি ফসল সংগ্রহ করেন। পরে তা বিক্রি করেন কাওরান বাজারসহ বড়-বড় মোকামে। দাম নিয়ে তার কথায় শোনা যায় অনেকটাই হতাশার সুর। এ মৌসুমে ভেলানগরে তিনি দ্বিতীয়বার এসেছেন বাঙ্গি নিতে। তিনি বলেন, জমিতেই যদি দাম বেশি পড়ে, তার সঙ্গে যোগ হবে পরিবহন খরচ। আবার পথিমধ্যে কিছু মাল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সব মিলিয়ে তাদের লাভ তুলতে খুব হিমশিম খেতে হয়। 
আলী হোসেন নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে মাল সংগ্রহ করি। কৃষক থেকে সরাসরি মাল কিনে আমরা বড় পাইকারি বাজারে সরবরাহ করি। অনেক সময় আমাদের লোকসান গুনতে হয়। এবার বাঙ্গির ফলন অনেকটাই ভালো। কিন্তু রমজান মাস হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি। তাই মাঠ পর্যায় থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে বাঙ্গি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। 
জাতীয়ভাবে কৃষি ও পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত এবং এআইপি (এগ্রিকালচার ইম্পর্টেন্ট পারসন) বিশিষ্ট পরিবেশবিদ অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, বাঙ্গি একটি অত্যন্ত উপকারী খাবার। এ অঞ্চলে এক সময় প্রচুর বাঙ্গির আবাদ হতো। দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়ন এক সময় বাঙ্গি চাষের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। মাঝখান দিয়ে বাঙ্গির আবাদ এ অঞ্চলে অনেকটাই কমে গিয়েছিল।

বর্তমানে আবারও বাঙ্গি আবাদে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কৃষক শ্রম-ঘাম দিয়ে লাভজনক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী। যথাযথ সহায়তা পেলে বাঙ্গি উৎপাদনে দাউদকান্দি উপজেলা আবারও দেশের অন্যতম উৎসস্থলে পরিণত হবে। বাঙ্গি উৎপাদন বৃদ্ধিতে তিনি সরকারের প্রতি সহায়তা ও সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। 
উপজেলায় প্রতি বছর বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ও সচেতন হওয়ায় ফলন নষ্ট হচ্ছে অনেক কম বলে মনে করে কৃষি অফিস। 
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে, যার বেশিরভাগই ভেলানগর মাঠে। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, এবার ১০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। আমরা সবসময় মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এতে জমিতে পোকামাকড় ও রোগ-বালাইয়ের সংক্রমণ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে  বলেন, কৃষক ন্যায্য মূল্য পেলে বাঙ্গির উৎপাদন প্রতিবছর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। অল্প সময়ে ফসলটি উৎপাদন করে কৃষক ভালো লাভবান হতে পারে। তাই সহজেই বাঙ্গি ফলন আবাদে কৃষকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।

×