ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

জুলাই আন্দোলনে হামলায় সংশ্লিষ্টতা

জাবির ৯ শিক্ষক ও ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার 

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৯ মার্চ ২০২৫

জাবির ৯ শিক্ষক ও ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার 

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৯ শিক্ষক ও ৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত, শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের ২৮৯ জন নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার, ১৫ জুলাই রাতে ‘কালরাত’ ঘোষণা এবং চার হলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদ। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় আরও ১০ শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা ও অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার  রাত তিনটার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভা শেষে এক প্রেসব্রিফিং এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়।
সাময়িক বরখাস্তপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেনÑ সাবেক উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ই¯্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দীন শিকদার। সাময়িক বরখাস্তদের অপরাধের অধিকতর তদন্তে স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একই অপরাধে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম ও রেজিস্ট্রার আবু হাসানের পেনশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জাবির দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাহিদুর রহমান খান ও রাজীব চক্রবর্তী। এছাড়া বরখাস্ত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কর্মচারী মহসিন খান।
এছাড়া ১৫-১৭ জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় আরও ১০ জন শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতা ও অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য স্ট্রাকচার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেনÑ অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক কানন কুমার সেন, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক পলাশ সাহা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ তারেক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম খোন্দকার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন শিকদার ও অধ্যাপক মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিবুর রৌফ শৈবাল, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক এ এ মামুন।
এদিকে, ১৪ জুলাই বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে, ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এবং একই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ২৮৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের জাবি শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী।

তবে তাঁদের নামের তালিকা এখনও প্রকাশ করেনি প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের ক্ষেত্রে সনদপত্র স্থগিত করা হবে। এছাড়া স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছেন এমন শিক্ষার্থীদের ফল স্থগিত বা বিশেষ ক্ষেত্রে সনদপত্র স্থগিত করা হবে।
অপরদিকে আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এবং একই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে বর্বরোচিত হামলা চালায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় হল থেকে শিক্ষার্থীরা উদ্ধারে এগিয়ে এলে তাদের উপর পাল্টা হামলা চালায় পুলিশ প্রশাসন। বর্বরোচিত হামলার এই রাতকে বিশ^বিদ্যালয়ের ‘কালরাত’ হিসাবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা চার হলের নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে এই সভায়। নাম প্রত্যাহার হওয়া হলগুলোÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ রাসেল হল, শেখ হাসিনা হল এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এই হলগুলোর নাম সংখ্যার ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছে।

×