ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১

ধাত্রী, গ্রামের মায়েদের পরম বন্ধু..

কামরুজ্জামান বাচ্চু, নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ১৮ মার্চ ২০২৫

ধাত্রী, গ্রামের মায়েদের পরম বন্ধু..

ছবি: জনকণ্ঠ

এক হাজারেরও বেশি মায়ের সন্তান প্রসব করিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ধাত্রী মনজু বেগম। বাউফলের দাশপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। গত ৩৫ বছর ধরে তিনি এই ধাত্রীর কাজ করে আসছেন। বিনা পারিশ্রমিকে তিনি সেবা দিয়ে যান, তবে কেউ যদি খুশি হয়ে কিছু দেন, তা হাসিমুখে গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সময় ধাত্রীর কাজ করতে গিয়ে তিনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। রয়েছে অনেক মজার স্মৃতিও।

এর মধ্যে একটি ঘটনা বিশেষভাবে মনে আছে তার। প্রায় ১৮ বছর আগে তার ননদের সন্তান প্রসবকালে তিনি ধাত্রী হিসেবে পাশে ছিলেন। তার ননদের ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান হয়েছিল, যার নাম রাখা হয় নাসরিন। কাকতালীয়ভাবে, সেই নাসরিনের সন্তান প্রসবকালেও ধাত্রী হিসেবে পাশে ছিলেন মনজু বেগম।

মনজু বেগমের মতো বাউফলের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই একজন করে ধাত্রী আছেন, যারা গ্রামের মায়েদের এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি ঘরে তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষিত থাকে। নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য তাদের ফোন করে ডাকা হয়, আর তারা কোনো সময়-ক্ষণ না দেখে ছুটে যান প্রসূতির বাড়িতে।

শুধু সন্তান প্রসবই নয়, অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়া, তাদের সুবিধা-অসুবিধার দেখভাল করাও তাদের দায়িত্বের অংশ। যদি কোনো জটিলতা দেখা দেয়, তবে তারা সংশ্লিষ্ট মাকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

ধাত্রী মনজু বেগম জানান, তিনি স্লোব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তাদের ধাত্রী কিট বক্স দেওয়া হয়েছে, যাতে হ্যান্ড গ্লাভস, ব্লেড, হেক্সাসল, তুলা ও তোয়ালেসহ ১৬ ধরনের সামগ্রী থাকে।

খেজুরবাড়িয়া গ্রামের ধাত্রী জাকিয়া বেগম জানান, সম্প্রতি তিনি ও আরও ৪৭ জন ধাত্রী স্লোব বাংলাদেশের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রতিমাসে একবার করে তাদের রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আপদকালীন বন্ধু হিসেবে তারা কাজ করেন।

নাজিরপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের ধাত্রী হাসিনা বেগম বলেন, একজন মায়ের সন্তান প্রসবের পর খুশি হয়ে নগদ টাকা, শাড়ি, কাপড়, তেল ও সাবান উপহার হিসেবে তারা পান। তবে তারা কারও কাছে কিছু চেয়ে নেন না। এটি তারা সেবার কাজ হিসেবেই মনে করেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ২-৩ শতাধিক মায়ের প্রসবকালীন সময়ে পাশে ছিলেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন দরিদ্র।

এ প্রসঙ্গে স্লোব বাংলাদেশ বাউফল উপজেলার প্রকল্প ব্যবস্থাপক (হেলথ অ্যান্ড স্যানিটেশন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, "আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে বাউফলে কাজ করছি। আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে হেলথ অ্যান্ড স্যানিটেশন অন্যতম। এর মাধ্যমে আমরা ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, যাতে একজন মা নিরাপদে সন্তান প্রসব করতে পারেন। আমরা এই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।"

এম.কে.

×