
ছবি:সংগৃহীত
মেজর হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দুই বীর। তাদের অভিজ্ঞতা ও বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চিত্র। তারা উভয়েই মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ ছিল সবচেয়ে বেশি, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এককভাবে কৃতিত্ব নিয়ে ইতিহাস বিকৃত করেছে।
মেজর হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম ১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুরে একটি ভয়াবহ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। কামালপুর বিওপিতে ভোর সাড়ে তিনটায় মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি কোম্পানি আক্রমণ চালায়, যার একটির নেতৃত্বে ছিলেন হাফিজ উদ্দিন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষণ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুদের আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করে। এই যুদ্ধে হাফিজ উদ্দিন মর্টারের স্প্রিন্টারের আঘাতে আহত হন। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে রাজনীতিবিদদের চেয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ২৫ মার্চের ভয়াবহ ক্র্যাকডাউনের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সাধারণ মানুষই এগিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা পাশের দেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতির দীনতা প্রকাশ করে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মার্চ মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হয়ে তিনি অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন। পরে ছাড়া পেয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ সকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে ও তার সাত বন্ধুকে বন্দি করে। তাদের চার বন্ধুকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়, কিন্তু তিনি ও আরও তিনজন বেঁচে যান। তিনি মনে করেন, স্বাধীনতা অর্জনে সাধারণ মানুষের অবদানকে সঠিকভাবে ইতিহাসে তুলে ধরা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে, যা দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা ইতিহাস বিকৃত না করে মুক্তিযুদ্ধে সত্যিকার অবদান ও সঠিক ঘটনাবলী তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ইতিহাস মুছে ফেলে নতুন করে লেখা যায় না এবং মুক্তিযুদ্ধে যাদের সত্যিকার অবদান রয়েছে, তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
আঁখি