ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ 

কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২৩:২৪, ১৭ মার্চ ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ 

দেশীয় মাছ, ছবি: জনকণ্ঠ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির সাচরা মাছ। এসব মাছ এখন আর সচারচর দেখা যায়না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পুকুর নালা, ডোবা, খাল ও বিল ভড়াট হয়ে যাওয়ায় এসব সাচরা মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। 

তার স্থান এখন দখল করে নিয়েছে, হ্যাচারীতে প্রজননকৃত মাছ। ব্যাপক জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটাতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও মাছ আমদানী হচ্ছে আমাদের দেশে। এক সময়  শৌল, টাকি,গজাল, পাপদা, পুটি, শিং, মাগুর, ভাটা, সরপুটি, বাইন, ফলি, ভ্যাদি, গুইঙ্গা, খইলশা, বাইলা, বোয়াল, মটকা চিংড়ি, মলেন্দাসহ বিভিন্ন প্রজাতীর দেশীয় সাচরা মাছ খুব সহজে পাওয়া যেত।

বাড়ির পাশে পুকুর, ডোবা ও নালায় জাকি জাল দিয়ে এসব মাছ ধরা হত। তিন বেলাই মাছ-ভাত খেত বাঙ্গালীরা। এখন আর দেশী এসব মাছ সচারচর পাওয়া যায়না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এক দিকে মাছের চাহিদা বেড়েছে। অপর দিকে ভড়াট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। যে কারণে দেশীয় এসব সাচরা মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও অধিক ফলনের আশায় জমিতে নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করায়, এসব মাছ মরে যাচ্ছে। বংশ বিস্তার হচ্ছেনা। 

এ ছাড়াও নদী-নালাও খালে এক শ্রেণীর জেলেরা  বিন্তি জাল , ধর্ম জাল ও ঘের জালসহ ছোট ফাঁসের বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে রেনু পোনা নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।  তারপরেও শহর কিংবা গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে   মাঝে মধ্যে এসব মাছ পাওয়া গেলে সরবরাহ খুবই কম। সুস্থ ও সুঠম শরীর গঠনের জন্য এসব মাছের ভূমিকা অপরিহার্য । 

বাউফলের নাজিরপুর ধানদি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আমজাত আলী মৃধা বলেন, ছোট কালে নদী-নালায়  মাছ ধরতে ধরতে বড় হয়েছি। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোতে তেঁতুলিয়া নদীর পানি ঘরের পাশে ক্ষেত টইটুম্বুর করত। তহন আমি পল্লা দিয়ে ওই পানিতে বোয়াল, শৌল, বাইন আরও কত কি মাছ ধরতাম। অহনও ক্ষেতে তেতুঁলিয়া নদীর পানি ওঠে। কিন্তু ওই সব মাছ আর পাওয়া যায়না”। 

বর্তমানে হাট বাজারগুলেতে এখন হ্যাচারিতে প্রজননকৃত থাই সরপুটি, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, রুই-কাতল, মৃগেল, সিলভার কাপ মাছ বিক্রি হচ্ছে। আবার পার্শ্ববর্তী ভারত ও বার্মা থেকেও মাছ আমদানী করা হচ্ছে আমাদের দেশে। কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে এসব মাছ। এসব মাছ আবার তরচাজা রাখতে ব্যবহার করা ফরমালিন। যা স্বাস্থ্যর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এবং খেতে সু-সাদু নয়। 

এ ব্যাপারে বাউফল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, “আমাদের দেশীয় এসব মাছ টিকিয়ে রাখতে হলে, পুকুর, ডোবা, নালা ভড়াট বন্ধ করে, মজা পুকুরগুলো খনন করে মাছ অবমুক্ত করতে হবে। ক্ষেতে খামারে অধিক কীটনাশক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।  তা না হলে একদিন এসব সাচরা মাছ পুরোপুরি বিলুপ্তি হয়ে যাবে।”

শহীদ

×