
ছবি : সংগৃহীত
প্রেমিকার ডাকে ঢাকা থেকে খুলনায় এসে ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়েছেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একটি বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী তাজকির আহম্মেদ (২৩)। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে খুলনা এসে নিখোঁজ হন তাজকির। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব নদেও গিলেতলা বালুরঘাট থেকে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার ও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে লোমহর্ষক হত্যার ঘটনা। নিহত তাজকির নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নৌখোলা ঝাউডাঙ্গা গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে। এক সময় পড়েছেন খুলনার ম্যানগ্রোভ ইনস্টিটিউটে। পরে ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন। একই সঙ্গে একটি চাকরিও করতেন। সোমবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে হয়। পুলিশের দাবি, যুবক তাজকির হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানায়।
সংবাদ সম্মেলনে কেএমপির উপ-কমিশনার (সিটিএসবি) এম এম শাকিলুজ্জামান জানান, খালিশপুরের বিআইডিসি রোডের মো. জলিল হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার সীমা (২০) বছর তিনেক আগে পরিবারের অমতে হাউজিং এলাকার মন্টু মিয়ার ছেলে ইসমাইল হোসেন অভিকে বিয়ে করেন। কিন্তু ওই বিয়ে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি, কয়েক মাসের মধ্যে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর অভি দেশের বাইরে চলে যান। এমন অবস্থায় নড়াইলের তাজকির আহম্মেদের সঙ্গে তার চাচাত ভাই এখলাছুর রহমান রনির শ্যালিকা পরিচয়ে সুরাইয়া আক্তার সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭/৮ মাস পরে অভি দেশে ফিরে এসে সাবেক স্ত্রী সীমার সঙ্গে যোগাযোগ ও পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করেন। শুরু হয় ত্রিমুখী প্রেম। এ নিয়ে সীমা ও অভির দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর মধ্যে তাজকিরকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটে অভি। সে সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাজকিরকে খুলনায় আসার আমন্ত্রণ জানায়। পুলিশ জানায়, তাজকির খুলনা আসলে অভি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অভি ও তার তিন বন্ধু মিলে হাত-পা বেঁধে মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে তাজকিরের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায়। তারা পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করে, গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে হত্যা করে। পরে চারবন্ধু মিলে নগরীর ডাকবাংলো মোড় থেকে একটি বস্তা কিনে আনেন। পরে তাজকিরের মৃতদেহ বস্তায় ভরে প্রথমে ইজিবাইক ও পরে নৌকার করে ভৈরব নদে ফেলে দেয়। ইতোমধ্যে মামলার আসামি তাজকিরের প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমা, অভির মা লাবনী বেগম (৪২), ইজিবাইক চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদ (২০) গ্রেপ্তার হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত অভির বন্ধু মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান জিতু (২৪) ও শহীদুল ইসলাম কাজীর ছেলে রিয়াদ কাজী (২২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।