ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

৪ লাখ টাকায় রফা, তদন্ত কমিটি

কুমিল্লায় রোগীর মৃত্যু হাসপাতাল ভাঙচুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ২০:২১, ১৭ মার্চ ২০২৫

কুমিল্লায় রোগীর মৃত্যু হাসপাতাল ভাঙচুর

কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউ সড়কের ‘কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার’ নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ইমরান হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে রবিবার রাতে স্বজনরা হাসপাতালটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পুলিশ, সেনাবাহিনীর যৌথ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে ওইদিন গভীর রাতে এক নেতার মাধ্যমে একটি প্রভাবশালী মহল রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৪ লাখ টাকায় রফা করা হয়। এ ঘটনায় আইনি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে জেলা সিভিল সার্জন আলী নূর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ জানান, এ ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সোমবার মেডিক্যাল অফিসার (কো-অর্ডিনেটর) ডা. শফিকুল ইসলাম ওই হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে ইমরান হোসেন রবিবার রাতে ট্রমা সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। ইমরানের মা নাজমা বেগম, চাচা জাকির হোসেন, নানা মানিক মিয়া, মামা সুমন মিয়াসহ স্বজনরা জানান, বুকের অসুখজনিত কারণে দ্বিতীয় দফায় গত শুক্রবার ওই হাসপাতালে ভর্তি হন ইমরান। পরদিন শনিবার ডা. আতাউর রহমান তার ফুসফুসের অপারেশন করেন। রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে রবিবার বিকেলের দিকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা অবস্থায় ইমরান হোসেন মারা যান। ইমরান আইসিইউতে মারা যাওয়ার পরও সে জীবিত আছে বলে দুইবার প্রায় ২৭ হাজার টাকার ঔষধ নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর মৃত্যুর পরও দেখতে না দিয়ে রোগী বেঁচে আছে বলে জানায়। তাদের কাছ থেকে এ রোগীর চিকিৎসার নামে কয়েক দফায় প্রায় তিন লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তারা জানান। এক পর্যায়ে রবিবার রাতে ইমরানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা ওই হাসপাতালের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য রোগী  ছোটাছুটি করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন হাসপাতালটি ঘিরে রাখে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এদিকে ওইদিন গভীর রাতে এক নেতার মধ্যস্থতায় একটি প্রভাবশালী মহল রোগী মৃত্যুর বিষয়টি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে রফা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন ওই হাসপাতালে থাকলেও ওই প্রভাবশালী মহলটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইমরান হোসেনের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন আলী নূর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ জানান, বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অবগত আছেন। এ ঘটনায় সোমবার সিভিল সার্জন অফিস থেকে সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. কামরুল হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×