ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

অর্থপাচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৭ মার্চ ২০২৫

অর্থপাচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যে শঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রযুক্তির এই উদ্ভাবন একদিকে যেমন আর্থিক লেনদেন সহজ করছে, অন্যদিকে এটি অবৈধ লেনদেন ও অর্থপাচারের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আরও গুরুতর, কারণ দেশে এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।

অর্থপাচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার

বিশ্বব্যাপী অর্থপাচারের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির কারণে লেনদেনের তথ্য ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে যায়, যা অপরাধীদের জন্য সুবিধাজনক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাদক, অস্ত্র ব্যবসা, সন্ত্রাসী অর্থায়নসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডে ক্রিপ্টো ব্যবহার বাড়ছে বলে জানিয়েছে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)।

বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সম্পর্কে সতর্ক করেছে। যদিও দেশে সরাসরি ক্রিপ্টো ট্রেডিং নিষিদ্ধ, তবে বিকল্প পথে অনেকেই এটি ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) জানিয়েছে, অর্থপাচারে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারের বেশ কিছু প্রমাণ তারা পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা

অর্থনীতি ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির অনিয়ন্ত্রিত লেনদেন অর্থনীতির জন্য হুমকি হতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক রফিকুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশে ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর নীতি না থাকায় এটি কালো টাকার বৈধতা দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।"

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ ড. তানভীর আহমেদ বলেন, "সঠিক নীতিমালা ছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার বাড়লে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি হবে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।"

বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ

বাংলাদেশ সরকার এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বৈধ স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্রিপ্টো লেনদেনের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করাই হবে কার্যকর সমাধান।

জনসচেতনতা জরুরি

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাধারণ জনগণকে ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কারণ অনেকেই উচ্চ লাভের আশায় বিনিয়োগ করছেন, কিন্তু ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন না। সাইবার প্রতারণা ও অর্থপাচার থেকে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সরকার, প্রযুক্তিবিদ ও অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামো গড়ে তোলার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আসিফ

×