
ছবি : জনকণ্ঠ
কথায় আছে, গরীবের আপদকালীন তহবিল হিসাবে মাটির ব্যাংক হচ্ছে পরম বন্ধুর মত। যারা একত্রে অনেক টাকা বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে জমা রাখতে পারেননা, তারাই কেবল মাটির ব্যাংকে নিজের সাধ্যমত পয়সা কিংবা টাকা জমা রাখতে পারেন। আর আপদকালীন সময় এই ব্যাংক ভেঙ্গে জমানো সেই টাকা কিংবা পয়সা কাজে লাগাতে পারেন।
বাউফলে এই মাটির ব্যাংক তৈরি করে শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের তৈরি মাটির ব্যাংক শুধু দেশেই নয়, এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বাউফলের বগা, বিলবিলাস, মদনপুরা, কনকদিয়া গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ এই মাটি ব্যাংক তৈরি শিল্পের সাথে জড়িত।
বিলবিলাস গ্রামের গৌতম পাল জানান, বিভিন্ন ডিজাইনের ছোট, বড় ও মাঝারি তিন ধরনের মাটির ব্যাংক তৈরি করেন তারা। এর বিভিন্ন নামও রয়েছে। যেমন, বোতল ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, লাউ ব্যাংক, গ্রেনেট ব্যাংক এবং গোল ব্যাংক।
তিনটি ডিজাইন নিয়ে এক সেট মাটির ব্যাংকের মূল্য হচ্ছে, বোতল ব্যাংক ৩৫ টাকা, গ্রামীণ ব্যাংক ১১০ টাকা, লাউ ব্যাংক ৪৫ টাকা, গ্রেনেট ব্যাংক ১১০ টাকা এবং গোল ব্যাংক ৩৫ টাকা। প্রতি সেট মাটির ব্যাংক তৈরি করতে ১৫-২০ টাকা খরচ হয় তাদের। উপার্জিত টাকা দিয়ে তারা সংসার চালান। বাচ্চাদের পড়ালেখার পিছনে ব্যায় করেন। তেমনি অস্বচ্ছল বা গরীব পরিবারগুলোর ক্ষুদ্র সঞ্চয় এই ব্যাংকে জমা রাখতে পারছেন। আবার আবার কেউ কেউ তা শো-পিচ হিসাবে ব্যবহার করছেন।
গৌতম পাল আরও জানান, গত বৈশাখ মাস থেকে এ পর্যন্ত ৬ মাসে ১৫ হাজার মাটির ব্যাংক তৈরি হয়েছে। তৈরিকৃত মাটির ব্যাংক উপজেলার বাইরে পটুয়াখালী, বরিশালও ঢাকায় পাইকারি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বাইরে যেমন, ভারত, চায়না, মালেশিয়া, দুবাই, সিংঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডে মাটির ব্যাংক রপ্তানি করা হচ্ছে। ঢাকার আড়ংয়ের মাধ্যমে তারা এ ব্যংক সরবরাহ করছেন। গৌতম পাল ও তার ৩ ভাই, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ১৪ সদস্যর প্রত্যেকেই এ কাজের সাথে জড়িত ।
ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অহিদুজ্জামান সুপন বলেন, আপদকালীন তহবিল হিসাবে মাটির ব্যাংক দরিদ্র পরিবারে বন্ধুমত কাজ করে। একজন লোক যত বেশি মিতব্যয়ী হবে, তার সঞ্চয়ের পরিমান তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। তার মতে, অর্থের সংকট মেটাতে বানিজ্যিক ব্যাংকে না হোক, অন্তত মাটির ব্যাংকে সঞ্চয়ের অভ্যাস করা উচিত।
উন্নয়নকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয় হচ্ছে আয়-ব্যয়। এ ধ্যান-ধারণা পাল্টে গিয়ে বর্তমানে সঞ্চয় হচ্ছে, আয়-সঞ্চয়। অর্থাৎ আয় থেকে নির্ধারিত সঞ্চয় বাদ দিয়ে ব্যয় করতে হবে। সঞ্চয় করতে হলে একজন মানুষকে মিতব্যায়ী হতে হবে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাটির ব্যাংক সাথে সঞ্চয় শব্দটি জড়িত। তিনি একজন উন্নয়ন কর্মী হিসাবে সনদ গৃহিনীদের নিয়ে উঠান বৈঠকে মাটির ব্যাংকে সঞ্চয় করার জন্য বলেছেন। এসব গৃহিনীর প্রত্যেকে পহেলা বৈশাখ মাটির ব্যাংকে টাকা জমা শুরু করেন। শেষ চৈত্র মাটির ব্যাংক ভাঙ্গেন। সেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা জমা হয়। এ জমাকৃত টাকা দিয়ে তারা কেউ নাক ফুল, ছাগল, মুরগী ক্রয় করেছেন।
কামরুজ্জামান বাচ্চু/মো. মহিউদ্দিন