ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

মারধর করে আসামির হাত-পা ভেঙে দিল বাদী!

নিজস্ব সংবাদদাতা, দাউদকান্দি

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১৬ মার্চ ২০২৫

মারধর করে আসামির হাত-পা ভেঙে দিল বাদী!

ছবি: জনকণ্ঠ

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় মামলার এজাহারনামীয় আসামি ধরতে গেলে, খবর পেয়ে আসামি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেও বাদীর হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে আসামি মাওলান ভূঁইয়ার।

এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে যৌথবাহিনী তাদের উদ্ধার করে। শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় বাদী পক্ষের রাকিব ও ছাত্রদল নেতা হৃদয়ের নেতৃত্বে আসামিকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ ওঠে। একই রাতে বাদীর বাড়িতে আসামিপক্ষের হামলা ও অগ্নিসংযোগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দড়িকান্দি এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের মামলার বাদী জসিম উদ্দিনের ছেলে রাকিব হোসেন এবং বিবাদী মৃত লালা ভূঁইয়ার ছেলে মাওলান ভূঁইয়া ও তার ছেলে মাসুদ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসা করে আসছিলেন। ইন্টারনেট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়।

এরই জেরে গত বুধবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় কুড়েরপাড় স্ট্যান্ডের সামনে রাকিবকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর বাদী পক্ষের রাকিব হোসেন বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) তিতাস থানায় মাসুদ ভূঁইয়া ও তার বাবা মাওলান ভূঁইয়াসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এই মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য শুক্রবার রাত আনুমানিক ১১টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আরিফুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মাওলান ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান চালান। তবে সেখানে কাউকে না পেয়ে পুলিশ আসামির স্ত্রী মাকসুদার সঙ্গে কথা বলে।

এসময় বাদীপক্ষের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে আসামির বাড়ি থেকে পাঁচশ গজ দূরে জালাল সরকারের বাড়িতে থাকা মাওলান ভূঁইয়াকে আটক করে। পরে বাদী রাকিব, ছাত্রদল নেতা হৃদয় ও তাদের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং তার হাত-পা ভেঙে দেয়।

চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশের দলটিকে একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহায়তায় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে।

সেই রাতেই মাওলান ভূঁইয়ার অনুসারীরা বাদী রাকিবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আসামির স্ত্রী মাকসুদা বলেন, "রাত আনুমানিক ১১টায় পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে ঘরে তল্লাশি চালায়। তখন আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পরই শুনতে পাই, জালাল সরকারের বাড়িতে রাকিব, হৃদয়, সাঈদ, বিল্লাল ও স্বপন মিলে আমার স্বামীকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।"

অন্যদিকে, মামলার বাদী রাকিবের মা মিসেস শিরিন বলেন, "গত ১১ মার্চ সন্ত্রাসী মাসুদ ও সাইফুল গং আমার ছেলেকে আক্রমণ করেছিল। সেই মামলায় শুক্রবার রাতে পুলিশ আসামিদের ধরতে আসে। আতঙ্কে আমি নিজের ঘরে তালা দিয়ে জালের ঘরে আশ্রয় নিই। পরে সেই ঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।"

তিতাস থানার ওসি মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, "যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পুলিশ ছিল না। পুলিশ পাশের একটি বাসায় ছিল। হামলাকারীদের না পেয়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করে এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করি।"

এম.কে.

×