ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

পাহাড়ি লেবুর দামে চাষিরা খুশি

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:১৫, ১৬ মার্চ ২০২৫

পাহাড়ি লেবুর দামে চাষিরা খুশি

ছবিঃ বিক্রির জন্য লেবু প্রস্তুত করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি এলাকার লেবুর দাম বেড়েছে। কারণ বর্তমানে লেবুর উৎপাদন কম। তাই বৃষ্টি না হলেও অনেক বাগান মালিক লেবুর দাম বেশি পেয়ে সেঁচের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় পানি সরবরাহ করছেন। তাতে করে গাছে গাছে লেবু আসছে। গাছ থেকে এসব লেবু সংগ্রহ করে আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন। 

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমপক্ষে ৭ হাজার টাকায় এক হাজার লেবু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ১ হাজার লেবু সর্বোচ্চ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন চাষিরা। আর স্থানীয় বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে শুরু করে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর বেশি দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

তবে বৃষ্টি শুরু হলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে লেবুর দাম কমে যেতে পারে। এজন্য প্রায় মালিকই সেঁচের মাধ্যমে পানি দিয়ে বাগানে লেবু উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। জেলার চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ি টিলা। টিলার ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লেবু গাছে ছাওয়া। পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও সমতলেও লেবু চাষ হচ্ছে। গাছে গাছে ঝুলছে লেবু।

লেবুচাষি মর্তুজ আলী জানান, সারাবছরই লেবু চাষ হয়। তবে বর্ষায় লেবুর ফলন তুলনামূলক বেশি। শুষ্ক মৌসুমে সেঁচ দিলেও লেবুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। দামও পাওয়া যায় বেশি। তাই পাহাড়ি এলাকার লোকজন পতিত জমি না ফেলে রেখে এখন লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কলম চারা করে, রোপণের বছর যেতেই ধরছে লেবু। 

হবিগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে ৮ থেকে ১০ টন লেবু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা বাগান মালিক নূরুল ইসলাম বলেন, লেবু চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। পাহাড়ি মাটিতে রোপণের বছর যেতেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গোড়া পরিষ্কার করে অল্প কিছু সার দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে লেবুর দাম বেশি। এ আশায় সেচের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় পানি, সার ও গোবর দেওয়া হচ্ছে। পরে গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করা হয় বিক্রির জন্য। মাসখানেক হলো দাম বেড়েছে। 

জেলার বাহুবল উপজেলার মুছাই ফল বাজারের আড়ৎদার তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, সানু মিয়া চৌধুরী ও মো. সাদিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দাম পেয়ে লেবুচাষিরা খুশি। বৃষ্টি না থাকায় লেবু গাছের গোড়ায় সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ায় গাছে গাছে লেবু ঝুলছে। চাষিরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে আড়তে এনে বিক্রি করছেন। আড়ৎ থেকে পাইকাররা ক্রয় করে দেশের নানা স্থানে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। তারা আবার বিক্রি করছেন ক্রেতাদের কাছে। এভাবে লেবু বিক্রি করায় সবাই লাভবান হচ্ছে। বৃষ্টি হলে লেবুর দাম কমে যাবে।

খুচরা বিক্রেতা আজমান মিয়া বলেন, বেশি দামে লেবু ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি করতে হয়। ক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে লেবুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও লেবু খেতে হচ্ছে। কিছু করার নেই।     

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: আকতারুজ্জামান বলেন, জেলার পাহাড়ি এলাকায় সম্ভাবনাময় ফসল লেবু। আমরা লেবু চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। তারা লেবুর ভালো ফলনও পাচ্ছেন। বর্তমানে সেঁচের মাধ্যমে পানি দেওয়ায় পাহাড়ে লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি।

ইমরান

×