ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

সবুজপাতার হাতছানি- নতুন মৌসুমে জেগে উঠেছে সমতলের চা বলয়

স্টাফরিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০১:০০, ১৬ মার্চ ২০২৫

সবুজপাতার হাতছানি- নতুন মৌসুমে জেগে উঠেছে সমতলের চা বলয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নতুন মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা বলয় সবুজপাতার হাতছানীতে জেগে উঠেছে। ঘন সবুজ চা-বাগিচায় ঘেরা অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উজ্জ্বল করে তুলেছে। দেশের সর্ব উত্তুরের পাঁচ জেলা নীলফামারী,পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলায় শুরু হয়েছে সমতলের বাগানগুলো থেকে চলতি মৌসুমের চা-পাতা চয়ন (আহরণ) কার্যক্রম।

তিন মাস বন্ধ থাকার পর নতুন মৌসুম (২০২৫) শুরু হয়। প্রুনিং, বাগানে সেচ ও পরিচর্যার জন্য তিন মাস পাতা কাটা বন্ধ ছিল। নতুন মৌসুমে নতুন কুঁড়িতে লাভের আশা করছেন চাষীরা। এতে চাষিদের মুখে ফুটেছে সবুজ-সোনালি হাসি। অন্যদিকে কারখানাগুলোতেও শুরু হয়েছে তোড়জোড়। কাঁচা চা-পাতা সংগ্রহ ও চা উৎপাদনের জন্য সব প্রস্তুতি চালু করেছে। বর্তমানে চা-চাষীরা ১৭ টাকা কেজি দরে কাচা পাতা কারখানা গুলোতে বিক্রি করছেন।

গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, চাষী ও শ্রমিকরা বাগান থেকে পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাগান থেকে চা-পাতা উত্তোলন করে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে চাষীদের। বিদায় নিচ্ছে শীত। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে সমতলের সবুজ শিল্প  চা। এটি  বদলে দিচ্ছে উত্তরবঙ্গের ৫ জেলার জনজীবনও। নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন বুনে এগিয়ে যাচ্ছে এখানকার সমতলের আপামর জনসাধারণ। বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রপ্তানী পন্য। চা এমন একটি জনপ্রিয় পানীয় যার চাহিদা নিতান্তই আকাশছোঁয়া । চা গাছ তার বৃদ্ধিতে কিছুটা আরণ্যক পরিবেশ পছন্দ।

চাষীরা জানায় প্রতিবছরের ১ মার্চ থেকে চা-পাতা সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার দেড় সপ্তাহ পর চা-পাতা চয়ন শুরু হয়েছে। সে মোতাবেক চাষীরাও তাদের বাগানের উৎপাদিত চা-পাতা উত্তোলন করে কারখানায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। এক চা বাগানের মালিক মহসিন মিয়া মধু বলেন, শ্রমিকদের আন্তরিকতার মধ্যে আশাতীত উৎপাদন সম্ভব। আমরা চা উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী কোয়ালিটি চায়ের উপর। পাশাপাশি চা গাছের সর্বোচ্চ পরিচর্যা করেছি।

চা-শ্রমিক বশির বলেন, দীর্ঘ তিন মাস পর আবারও বাগান থেকে পাতা উত্তোলনের কাজ করতে পারছি আমরা। এতে আমরা অনেক আনন্দিত। চা শ্রমিক দিলাপ কুমার বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে  বাগানে চায়ের পাতা তুলি। আগে বাসায় কাজ না থাকলে দূরে যেতাম কাজের জন্য। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় কিছুটা শান্তিতে আছি। চা শ্রমিক অনিকা রায় বলেন, চা- বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আগে বাসায় বসে থাকতাম, কোনো কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে সংসারে সহায়তা করতে পারছি। বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারছি। চা শ্রমিক লতা রানী বলেন, আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম। বাসা থেকে আমার স্বামী কাজ যেতে নিষেধ করত। এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে টি বাগানে কাজ করি। 

দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চায়ের উৎপাদনের দিক থেকে এবারও উত্তরাঞ্চল টানা চতুর্থবারের মতো দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে। গেলো মৌসুমে (২০২৪) পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ১৫১ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। ২০২৩ সালের মৌসুমে চায়ের উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ২৩০ কেজি। এর আগে ২০২২ সালে উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি।

বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় চায়ের বাগান গড়ে তোলে। এর পর থেকে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ক্ষুদ্র চাষী পর্যায়ে চা চাষ ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চগড় জেলার পর ২০০৭ সালে লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় চা চাষ শুরু হয়। 

উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ১০টি ও অনিবন্ধিত ২০টি বড় চা-বাগান (২৫ একরের ওপরে) রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৭৪টি নিবন্ধিত ও ৬ হাজার ১৯৭টি অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তনের চা-বাগান (২৫ একরের কম) আছে। ২০২৩ সালে উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজার ১৩২ দশমিক ১৮ একর জমিতে চা চাষ হলেও এবার কিছুটা কমেছে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে ১১ হাজার ৫২৬ দশমিক ৮৭ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। 

এদিকে উত্তরাঞ্চলের চা চাষের পরিধি ও উৎপাদন বিবেচনায় ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে চায়ের তৃতীয় নিলাম কেন্দ্র (অনলাইনভিত্তিক) চালু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৫৩টি চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানা অনুমোদন নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ২৮টি ও ঠাকুরগাঁও জেলায় একটি কারখানা চালু রয়েছে বলে আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ খান জানান।

ইমরান

×