ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১

লালমনিরহাটে দাদন ব্যবসায়ীদের নির্যাতনে দিন মজুরের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট 

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ১৫ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০০:০১, ১৬ মার্চ ২০২৫

লালমনিরহাটে দাদন ব্যবসায়ীদের নির্যাতনে দিন মজুরের মৃত্যু

ছবি: প্রতীকী

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে চড়া সুদে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় দাদন ব্যবসায়ীদের রাতভর নির্যাতনে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ নির্যাতনের পর তাকে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। নিহত দিনমজুরের নাম ফারুক হোসেন। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিসামত নগরবন্দ গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় মজিবর শুক্রবার রাতে সদর থানায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ মামলার দুই নম্বর আসামি স্বপন কুমারকে গ্রেপ্তার করেছে।

মামলা সূত্রে জানাযায়, সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পাশের দিনাদলি সুবারবাড়ির গ্রামের এরশাদ হোসেন, সুবাস চন্দ্র ও মুকুল চন্দ্র দাদন ব্যবসা করেন। এর সুদ সবাই ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। দিনমজুর ফারুক অভাবে সংসারে খরচ জোগাতে এরশাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার, সুবাসের কাছ থেকে ২০ হাজার ও মুকুলের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা চড়া সুদে ঋণ নেন। যার অধিকাংশই পরে পরিশোধ করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহতের পরিবার। ফারুককে সহজ সরল ভেবে সুদ-আসলে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। 

এই ভয়ে তিন মাস আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যান দিনমজুর ফারুক। তিনি স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই পথ থেকে তাঁকে আটকে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যান দাদন ব্যবসায়ীরা। সেখানে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে ফারুকের স্ত্রী রাশিদা বেগম  দাদন ব্যবসায়িদের আস্তানায় গিয়ে স্বামীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও কোন কাজ হয়নি।বাধ্য হয়ে স্বামীকে চক্রের কাছে রেখে নিজের কাজে ফেরেন স্ত্রী। পরদিন শুক্রবার সকালে স্থানীয় বাঁশবাগানে ফারুকের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

ফারুকের স্ত্রী রাশিদা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পথে রাস্তায় জাহাঙ্গীরের লোকজন আটক করে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা আমার স্বামীকে নির্যাতন করে। শুক্রবার  সকালে স্বামীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর কাপড়ের ব্যাগ মিলেছে তাদের একজন সুবাসের বাড়িতে। দাদন ব্যবসায়ীরা আমার স্বামীকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী বলেন, ভিকটিম দাদনে টাকা নিয়েছিলেন। টাকার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহতের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। এ মামলায় দুই নম্বর আসামি স্বপন কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বলেও জানান তিনি।

শহীদ

×