
.
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিন-রাত মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। মশার যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কয়েল ও বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেও নিস্তার মিলছে না। এতে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। মশার যন্ত্রণায় দিনেরবেলায়ও স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকগুণ উৎপাত বেড়ে যায়। তখন মশারির মধ্যে কিংবা মশা তাড়ানো উপকরণ ছাড়া বসে থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। মশার উৎপাতে তারা ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না। মশার উপদ্রবে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও রয়েছে বিপাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
শীতের মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে বেড়েছে মশার উপদ্রব, বলছেন শহরবাসী। স্থানীয় লোকজন বলেন, দিনেরবেলায় কোনো রকমে টিকতে পারলেও সন্ধ্যা হওয়ার পরপর ঘরে-বাইরে মশার যন্ত্রণায় দাঁড়ানোই দায় হয়ে পড়ে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও মশার কামড় থেকে রেহাই মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতেও মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষকে। জনসচেতনতা নেই, প্রচারণাও নেই। পৌর কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের যেসব সেবা দিয়ে থাকেন, তার মধ্যে মশক নিধন অন্যতম কাজ। কিন্তু এ কাজটিই ঠিকমতো করছে না তারা। পৌরসভার বাসিন্দারা বলছেন, ডেঙ্গু আগের বছরগুলোতে যে ভয় ছড়িয়েছে, তা এখনও ভুলেনি মানুষ।
ডেঙ্গু নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা রয়েছে। তবে সেই সতর্কবার্তা পৌর কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছেনি। আগে শহরের মশক নিধন কার্যক্রম স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দেখভাল করতেন। গত ৫ আগস্টের পর সেই দায়িত্ব এসেছে একজন কর্মকর্তার ওপর। দুর্বল মনিটরিংয়ের সুযোগে অনেকটা গা ছাড়া ভাব দেখা গেছে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যেও।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মাসের বেশি সময় তারা এলাকায় মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখেননি। নালায় কোনো কীটনাশক দেওয়া হয়নি। ফগার মেশিনের শব্দও কেউ পাননি।
পৌরসভার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এখন মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে পৌরসভা। অবসর সময়ে শহরের আদালত চত্বর, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠ, থানার মোড়, ক্লাব সুপার মার্কেটের সামনে আড্ডা দেন শহরবাসী। মশার কারণে সন্ধ্যার পর কেউ টিকতে পারে না। বৃহস্পতিবার এশার নামাজের জন্য আদালত চত্বরে যান জাকারিয়া হাসান। তিনি বলেন, মশার যন্ত্রণায় দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল। মাথার ওপর হাজার হাজার মশা, দলবেঁধে ভন ভন করছে। কতক্ষণ মশা তাড়িয়ে পারা যায়। শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইরিন খাতুন বলেন, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল, থানা ও পৌরসভা ভবনও রয়েছে এই ওয়ার্ডে। এখানেও গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ফগার মেশিনের কোনো শব্দও পাওয়া যায়নি। পৌরসভা কোথায় মশা নিধনে কাজ করছে জানেন না। তবে তাদের এই এলাকায় তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মশার উপদ্রব কোনোভাবেই কমছে না।
শহরের ব্যস্ত এলাকা বাতেন খাঁর মোড়ের চায়ের দোকানদার আব্দুল আলিম বলেন, তারা দুই মাসের মধ্যে পৌরসভার কাউকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি। সন্ধ্যার পর মশার যন্ত্রণায় মানুষ দোকানে বসে থাকতে পারে না।
যে কারণে মশক নিধন কার্যক্রম স্থবির ॥ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। আগে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে শহরে মশক নিধন কর্মসূচি পালিত হতো। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়েছে। মেয়র পদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়রের ক্ষমতা পেলেও আগের মতো মশক নিধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা না থাকায় ভেঙে পড়েছে মশক নিধন কার্যক্রম।
অভিযোগ উঠেছে, মশা নিধনে বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর নেই ফলে জবাবদিহিতাও নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, একজন কাউন্সিলর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়। এজন্য জনগণের কাছে তার কাজের জবাবদিহি করতে হয়। সে জায়গা থেকে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এখন সেই চিত্র নেই। ফলে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদ জানান, এখন মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে পৌরসভা। তিনি আরও বলেন, সক্ষমতার অভাবে ১৫টি ওয়ার্ডে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। ৭টি ফগার মেশিনের মধ্যে দু’টি নষ্ট। শহরকে প্রাধান্য দিয়ে মশা নিধনে ৫টি ফগার মেশিন নিয়মিত কাজ করছে। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবছর ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালানো হয়। কিন্তু এবার সম্ভব হয়নি।