ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা

চিৎকার করো মেয়ে, দেখি কতদূর গলা যায়

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ১৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২০:৪২, ১৪ মার্চ ২০২৫

চিৎকার করো মেয়ে, দেখি কতদূর গলা যায়

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মিলনায়তনে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী কবিতা আবৃত্তির আয়োজন অনুষ্ঠিত, ছবি : জনকণ্ঠ।

সময়টা যেন বড্ড অস্থির। সেই সুযোগে প্রতিনিয়তই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে নারীরা। তুচ্ছ ঘটনায় নির্যাতিত কিংবা হেনস্তা হচ্ছে নানা শ্রেণী-পেশার নারী।  ধর্ষণের  শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু থেকে অন্তঃসত্ত্বা নারী। আর সেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে শোনা গেল কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। বসন্তের সকালে প্রতিবাদী চেতনায় উচ্চারিত হলো কবিতার পঙ্ক্তিমালা। বাচিকশিল্পীদের কণ্ঠের আশ্রয়ে পঠিত হলো পৃথিবীর নানা প্রান্তের প্রখ্যাত কবিদের কবিতা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে নারীর বাসযোগ্য করে তোলার প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত হলো কবিতানির্ভর চমৎকার আয়োজন।

‘চিৎকার করো মেয়ে, দেখি কতদূর গলা যায়’ স্লোগানে শুক্রবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই কবিতাপাঠ ও আবৃত্তির  আয়োজন।  ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে  যৌথভাবে প্রতিবাদী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে  তিন বাচিকশিল্পী লায়লা নওশীন, অনন্যা মাহমুদ ও তাসনুভা মোহনা।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা ও বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম বলেন, গত দু’দিনে বা তার আগে থেকে ফেসবুকে চোখ রাখলেই মনে হয়েছে  আবেগ এবং বেদনার প্লাবন বয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদের প্লাবন বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই আয়োজনে এসে উপস্থিতি স্বল্পতা দেখে বিস্মিত হয়েছি। কারণ, আমি জানি এই আয়োজনটি সম্পর্কে ফেসবুকে জানানো হয়েছে। বহু মানুষ দেখেছে। তাদের উচিত ছিল- ব্যক্তিগত চেতনা থেকে, বোধ থেকে এখানে এসে উপস্থিত হওয়ার। কিন্তু হয়নি। আসলে আমরা আমাদের আবেগের জায়গায়, চেতনার জায়গায়, বোধের জায়গায়, ইচ্ছের জায়গায়, বাসনার জায়গায় খুব মেকি এবং বানোয়াট। এই মেকিত্ত্ব যতদিন না ঘুচবে ততদিন আমরা আমাদেরকে একটা মুখোষের আড়ালে চলমান কিংবা ধাবমান রাখবো। এটা খুব বেদনায়ক।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের আয়োজন আমাদের স্কুল-কলেজগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে করা উচিত। তাহলে সচেতনতা বাড়বে।

সংক্ষিপ্ত কথন শেষে শুরু হয় কবিতার পরিবেশনা।  দোলায়িত ছন্দে উচ্চারিত হয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘দুঃসময়’, শঙ্খ ঘোষের বলো তারে ‘শন্তি শান্তি’, তসলিমা নাসরিনের ‘সবিতার কবিতা’, শুভ দাশগুপ্তের ‘আমিই সেই মেয়ে’, সৌমেন অনন্তের ‘সেই মেয়েটা’, কাহলিল জিব্রানের কবিতা ‘এবং ভয়’ এবং আকাশ চক্রবর্তীর  ‘চিৎকার করো মেয়ে দেখি কতদূর গলা যায়’ সহ বেশ কিছু কবিতা।

এসব কবিতা আবৃত্তি করেন মাহি ফারহানা, তাহসিন রেজা, ফারজানা সিগ্ধা, ইশরাত শিউলি, ফারহিন তামান্না, বুশরা আহমেদ, মেহবুবা হক রুমা, নার্গিস সুলতানা, আমিনা সুলতানা, কনক ইসলাম, শিমলা পারভনি সিমা, সুজাউল কবির আবীর, কামরুজ্জামান নীল, রোদ প্রমুখ। স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন কবি নাহিদা আশরাফী, শিরিন বেবী প্রমুখ।

আবৃত্তি পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল নারীর চলার পথের প্রতিবন্ধকতার কথা। সেই সূত্র ধরে আবৃত্তিশিল্পীরা বলেন, বিশ্বব্যাপী সমাজ ও সভ্যতা এগিয়ে গেলেও বাংলার নারীরা এই উত্তরাধুনিক যুগেও তাদের চলাফেরা, পোশাক-আশাক আর শুধু নারী হওয়ার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে নানাভাবে। বাদ যাচ্ছে না কন্যাশিশুও।

ধর্ষণ, শারীরিক নিপীড়ন, নির্যাতন, বুলিং, মৌলবাদীদের দ্বারা বুলিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিং এগুলো নিত্য-নৈমেত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমারে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের পূর্বসূরী নারীরা যেভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে, শিল্প-সাহিত্যে সাহসী উচ্চারণ করেছেন অধিকার প্রতিষ্ঠায়, আমরাও হাঁটবো সেই পথে। আমরা চাই সমাজে দিন কিংবা রাতে  পছন্দমতো পোশাক পরে স্বাধীনভাবে চলাচল করবে নারী। নারীর পরিচয় ছাপিয়ে মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই আমরা।

/মো. মহিউদ্দিন

×