
রেশমি মিষ্টি
খাবারের নাম রেশমি মিষ্টি। চিনি ও জাফরান কালার দিয়ে তৈরি এ মিষ্টি ৮০ দশকের মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম। তবে এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। এ যেন একেবারে বিলুপ্তির পথে। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার জালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব শেখ (৮০) দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর এখনও এ পেশাটি ধরে রেখেছে। বাইসাইকেলে চড়ে শহর-গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন পুরনো ঐতিহ্যবাহী রেশমি মিষ্টি। তবে এখন অনেকের কাছে আবার মুম্বাই ক্যান্ডি নামেও পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৮০-৯০ দশকের মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় ও মুখরোচক খাবার ছিল রেশমি মিষ্টি। চিনি জ্বাল দিয়ে ঘনো করে বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হয় রেশমি মিষ্টি। বিভিন্ন রকমের জিনিস পত্র তৈরি করা হয়। ফুল,পাখি, হুক্কা, সাইকেল, বাঁশি, পাখিসহ নানা ধরনের খেলনাপাতি তৈরি করা হয় এ মিষ্টি দিয়ে। আগে আট আনা, এক টাকা দুই টাকা দাম হলেও এখন দাম ১০ টাকা, ২০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা হয় রেশমি মিষ্টি বিক্রি করা আইয়ুব শেখের সাথে। এ সময় বিভিন্ন বয়সী ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে দেখেন ও কিনে নেন। বয়স্করা নাম জানলেও এখনকার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দেখে ও নাম শুনে অবাক হন।
বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির ছাত্র রাহিল খান জনকণ্ঠকে বলেন, আগে দেখিনি, নামও শুনিনি। জীবনের প্রথম দেখলাম ও নাম শুনলাম। দুইটা ফুল ও একটা সাইকেল কিনেছি। দেখতে ও খেতে ভালো লেগেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসিতা খান জনকণ্ঠকে বলেন, ছোট সময় স্কুলে পড়ার সময় কিনে খেতাম। এখন আর দেখা যায় না। বহু বছর পড়ে দেখলাম তাই ছেলেমেয়ে জন্য কিনে নিলাম। শৈশবে ফিরে গেলাম। এর স্বাদ-গন্ধ ভিন্ন রকমের। আগেরকার মানুষ ছাড়া এটা চিনবে না। এখন আর এ ঐতিহ্য দেখা যায় না। বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বোয়ালমারী পৌরসভার বাসিন্দা শাহিনুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক বছর পর রেশমি মিষ্টি দেখতে পেলাম। আমরা যখন প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলের সামনে পাওয়া যেতো। দুই টাকা, এক টাকা দিয়ে কিনে খেতাম। এটা একটা পুরনো দিনের ঐতিহ্য। এখন এটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চলার পথে দেখতে পেয়ে কিনে খেলাম ও বাড়ির বাচ্চাদের কিনে দিলাম ও এর সাথে পরিচিত করালাম।
বিক্রেতা আইয়ুব শেখ জনকণ্ঠকে বলেন, আমি জিয়াউর রহমানের আমল থেকে রেশমি মিষ্টি তৈরি করি। আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। প্রতিদিন এক কেজি চিনি ও ফুড কালার দিয়ে এ রেশমি মিষ্টি তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। দাম ১০ টাকা, ২০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৮/৯ শত টাকা বিক্রি করি। খরচ বাদে ৪/৫ শত টাকা রোজগার হয়। এ দিয়েই চলে আমার সংসার।
তিনি আরও বলেন, "হুক্কার নল, টানে কল কল, দাদা খায় দাদী বাতাস দেয়, আড়াই ভরি সোনার হাড় গাংয়ের ঘাটে যাইও না,চোর-চুট্টার ভয় বাক্সোয় রাখতে হয়" এমন নানা ধরনের শ্লোক বলে আগেরকার দিনে এ রেশমি মিষ্টি বিক্রি করতাম।
শহীদ