ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ঐতিহ্যের ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদের’ নানা কল্পকথা দীর্ঘ কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদ’

অভিজিৎ রায় ও এন কে বি নয়ন, সাতৈর ফরিদপুর

প্রকাশিত: ০১:০৮, ১৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৩, ১৩ মার্চ ২০২৫

ঐতিহ্যের ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদের’ নানা কল্পকথা দীর্ঘ কালের সাক্ষী ঐতিহাসিক ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদ’

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ‘সাতৈর শাহী জামে মসজিদ’। ঐতিহ্যের সাতৈর শাহী মসজিদ সম্পর্কে রয়েছে নানা কল্পকথা। ঐতিহাসিক মসজিদ নিয়ে লোকমুখে অনেক কিংবদন্তি কাহিনী আজও শোনা যায়।

ফরিদপুর জেলা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নে  মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সাতৈর বাজারে অবস্থিত ‘সাতৈর শাহী মসজিদ’। ঐতিহাসিক মসজিদটির বয়স প্রায় ৭শ বছর। উপজেলার সাতৈর অঞ্চলে আরব থেকে অসংখ্য ইসলাম প্রচারকদের মধ্যে ১২ জনের বিশেষ পরিচিত রয়েছে। তাদের নাম ঘিরেও রয়েছে নানা জনশ্রুতি। এখনও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তিভরে স্মরণ করা হয় এসব ওলি-আউলিয়াদের নাম। তাদের প্রচেষ্টা ও সম্মানে প্রায় ৭শ বছর আগে নির্মিত হয় সাতৈর শাহী মসজিদ। 

এলাকাবাসী ঐতিহাসিক অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে বিভিন্ন মোগল সম্রাটের নামের সঙ্গে মসজিদটির নাম-নির্মাতা হিসেবে যুক্ত করতে চাইলেও সঠিকভাবে তথ্য-উপাত্ত বা দালিলিক প্রমাণাদি দিতে পারেননি কেউই। তবে অনুমান করা হয়, এটি বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সমসাময়িককালে নির্মাণ করা হয়। 

সাতৈর এর নামকরন যেভাবে হলো : শাহ-হে-তুর একটি ফারসি শব্দ এর অর্থ অলীর পাহাড়, আনুমানিক ৭শত বছর পূর্বে এই সাতৈরে বহু অলিদের বসবাস ছিলো বলে জানা যায়, তাই অলীর পাহাড় বা শাহ হে তুর শব্দ থেকে ধিরে ধিরে সাতৈর শব্দের উৎপত্তি।

সাতৈর শাহী মসজিদের নির্মিত সময় : ভূষণা রাজ্যের ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা কবি সমর চক্রবর্তীর ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি এটি নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের আমলেই নির্মিত স্থাপনা বলে মত দিয়েছেন। বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলে ভূষণা রাজ্যের সুপ্রাচীন নৌবন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল সাতৈর ও তার আশপাশের অঞ্চল। সাতৈর শাহী মসজিদের পাশ ঘেঁষেই গেছে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড বা শেরশাহ সড়ক। সে কারণে অনেকেই মনে করেন, সাতৈর শাহী মসজিদটি শের শাহের আমলের নির্মিত (১৪৮৬-২২শে মে, ১৫৪৫)।

ধারণা করা হয় যে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার জনৈক পীরের সম্মানে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে যায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হওয়ার পর মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়।

ঐতিহাসিক সাতৈর মসজিদ থেকে দু-তিনশ হাত দক্ষিণ দিকে অবস্থিত একটি ভিটা রয়েছে, যা বর্তমানে মৌলভী বাড়ির ভিটা নামে পরিচিত। এ ভিটাটি প্রাচীনকালের ছোট ছোট ইটের গাঁথুনিতে ভরা। এখানে কমপক্ষে আটজন সুফি-সাধকের কবর রয়েছে বলে জানা যায়। লাল মাটি আর ছোট ছোট ইট প্রমাণ করে, একসময় কবরগুলো বিরাট স্মৃতিসৌধ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল।

মসজিদটির মিনারের গঠনশৈলী ও ইটের আকার দেখে বিশেষজ্ঞমহল এটিকে চতুর্দশ আমলের ইমারত হিসেবে শনাক্ত করেছেন। তবে ঐতিহাসিক মতবিরোধ যা-ই হোক, মসজিদটি আশপাশে কবরে শায়িত ইসলাম ধর্মপ্রচারক আউলিয়াদের সম্মানের প্রতীক হিসেবে নির্মিত হয়েছিল এ বিষয়ে সবাই একমত। 

আজও সাতৈর শাহী মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় যেসব ধর্ম প্রচারকের কবর বিদ্যমান তারা হলেন- হযরত জালাল শাহ বাগদাদী (রহ.), মসজিদের পূর্ব পাশের মৌলভী বাড়ির ভিটায় বিদ্যমান। হযরত জায়েদ শাহ বাগদাদী (রহ.), হযরত বোখারী শাহ বাগদাদী (রহ.), হযরত সুফী বুট্টি শাহ্ বাগদাদী (রহ.), হযরত শাহ মইজউদ্দিন তেগ বোরহানি ইয়েমানি (রহ.), হযরত শাহ সুফী মুছি হাক্কানী (রহ.), হযরত শায়েখ শাহ আলী ছতরী (রহ.)।

হযরত শায়েখ শাহ আলী ছতরী (রহ.) চতুর্দশ শতকে এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আগমন করেছিলেন বলে অনুমিত হয়। ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। হযরত শায়েখ শাহ আলী ছতরীর (রহ.) কামালিয়্যাত ও ত্যাগী জীবনযাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার কাছে মুরিদ হয়েছিলেন বলে অনেক ঐতিহাসিক দলিল পেশ করেছেন।

হযরত শাহ কলিমুল্লাহ্ (রহ.) : মসজিদের দক্ষিণ পাশে প্রচীনকালের ছোট ছোট ইটে বাঁধানো দুটো কবর রয়েছে। একটি হযরত শাহ কলিমুল্লাহ (রহ.)-এর কবর, অপরটি হযরত মইজউদ্দিন কানী শাহ (রহ.)-এর। মসজিদের পূর্বপাশে রয়েছে হযরত শাহ কলিমুল্লাহ (রহ.) সহোদর হযরত লাল শাহ (রহ.)-এর কবর।

হযরত আবদুল্লাহিল কাফী (রহ.) ও হযরত আবদুল্লাহিল সাফী (রহ.) সহোদর দুই ভাইয়ের মাজার সাতৈরের কাছে ধোপাডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬ খ্রি.-১৬০৫ খ্রি.) শায়খ আবদুল্লাহিল কাফী (রহ.) ও তার ভাই ইসলাম প্রচারের জন্য এ এলাকায় আগমন করেন। তারা উভয়ে ওই এলাকায় ইসলামের বিস্তারে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় বহু লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

হযরত লালশাহ (রহ.) ঐতিহাসিক সাতৈর শাহী মসজিদের পূর্ব পাশে শায়িত রয়েছেন। হযরত মইজউদ্দিন কানী শাহ (রহ.) মসজিদ সংলগ্ন দুটি বাঁধানো কবরের একটিতে এই ধর্ম প্রচারক শায়িত রয়েছেন।

হযরত উড়িয়ান শাহ (রহ.)-এর কবর দুধ পুকুরের উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত। হযরত উড়িয়ান শাহ (রহ.) দ্বাদশ শতকে বাংলায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেছিলেন। তখনকার ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু-বৌদ্ধ অধ্যুষিত, বিরূপ ভাবাপন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তিনি প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাকে অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে জিহাদের মাধ্যমে তৌহিদের ইসলাম প্রচার করতে হয়েছিল। 

আঞ্চলিক লোকগাঁথা থেকে জানা যায় : হযরত উড়িয়ান শাহ (রহ). ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্মযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তার মস্তকের কবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আর তার শরীরের বাকি অংশের কবর সাতৈরে বিদ্যমান। মসজিদটি ঘিরে নানা জনশ্রুতি রয়েছে, শত্রুবাহিনী তার শিরচ্ছেদ করলে মস্তকহীন দেহ নিয়ে তার ঘোড়া ছুটে আসে সাতৈর। এসময় প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসে। এসময় মস্তকহীন দেহ থেকে আওয়াজ আসে-আসরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি অজুর পানি দাও। খাদেম অজুর পানি না দিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘হুজুর, আপনার মাথা কোথায়?’ এই প্রশ্নে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ‘উহ’ শব্দ করে ওঠেন। এরপর ঘোড়া ও খাদেমের শিরচ্ছেদ দেখা যায়।

তবে অনেকের ধারণা, শত্রুবাহিনীর কেউ ঘোড়া অনুসরণ করে সাতৈর পৌঁছে খাদেম ও ঘোড়ার শিরচ্ছেদ করে পালিয়ে যান। তবে ঘটনা যা-ই হোক, হযরত উড়িয়ান শাহ (রহ.)-এর দেহ মোবারকের কবরের পাশে তার জনৈক খাদেম ও ঘোড়ার কবর প্রায় আট-নয়শ বছরের ব্যবধানের পরও আজো অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। আজও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে হযরত উড়িয়ান শাহ (রহ)-এর দরগাহবাড়ি নামে পরিচিত কবরস্থানে শতশত পুণ্যার্থী ভক্তের সমাবেশ দেখা যায়। 

মসজিদের আকার ও পরিধি : বর্গাকার এই মসজিদটি দৈর্ঘ্য ৬২ ফুট, প্রস্থ্য ৬২ ফুট, উচ্চতা এখনও সমতল ভূমি হইতে ৩০ ফুট, ওয়ালের গাঁথুনী সাড়ে ৫ ফুট, মাটির নিচে অদৃশ্য অবস্থায় আছে ১০ ফুট। কেরামতি হচ্ছে, এই মসজিদে কোন লোহা কিংবা কাঠের কড়ে-বর্গা নাই। সম্পূর্ণ শূন্যের উপর ছাদ বা গম্বুজ কয়টি অক্ষত অবস্থায় আজও তেমনি আছে। এই মসজিদের নাম এখনও লোকের মুখে গায়েবী মসজিদ। মোট ৯টি কন্দ আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির ভেতরে পাথরের তৈরি চারটি স্তম্ভ, দেয়ালে এবং দেয়ালের গা সংলগ্ন মোট ১২টি পিলার রয়েছে। আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে এই মসজিদে কোনও লোহা বা কাঠের বর্গা বা ভীম নেই। সম্পুর্ন শূন্যের উপর ছাদ বা গম্বুজটি আজও অক্ষত অবস্থায় আছে। মসজিদের গম্বুজ নির্মানে পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। আরব দেশীয় মসজিদগুলোর মতো মোট তিনটি মেহরাব আছে। 

সংস্কার করা হয়েছে মসজিদটি : মসজিদটি সংস্কার করে বাইরে ও ভিতরে টাইলস স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া এসিও লাগানো হয়েছে। পাশেই মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি দোতলা ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পাশ্ববর্তী মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট এবং প্রস্থ ৬২ ফুট। ১৯৯৪ সালে এবং ২০০০ সালে সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন হয়।   

মসজিদের ইমাম ও খাদেম : মসজিদটিতে ইমাম ও খতিব রয়েছেন তিন জন। তারা হলেন হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস আলী, হাফেজ মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান ও মাওলানা আব্দুস সালাম। এছাড়া মোয়াজ্জিন রয়েছেন এক জন, খাদেম দুই জন ও ক্যাশিয়ার রয়েছেন একজন। মসজিদটি পরিচালনায় একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো: খলিলুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। মসজিদটিতে প্রায় দুই হাজার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের জন্য আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত দানের অর্থ দিয়েই মসজিদটির উন্নয়ন ও ব্যায়ভার বহন করা হয়।
 
মসজিদকে ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকাহীনি : মসজিদটি সম্পর্কে অনেক কাহিনী এলাকায় প্রচলিত আছে। যা বিশ্বাস করেই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ নানা ধরনের মানত নিয়ে আসে। যেমন : মসজিদটি আল্লাহর হুকুমে এক রাতে মাটি ফেড়ে গজিয়ে ওঠে, মসজিদের ভেতরের খুঁটি চারটি বিভিন্ন সময়ে হাসি-কান্না করে, মসজিদের পিলারগুলোর কাছে যা আশা করা যায় তাই পাওয়া যায়, মসজিদের ইট বাড়িতে রাখলে উঁইপোকা লাগে না, মসজিদের ধুলা গায়ে মাখলে যেকোনো ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, মসজিদে এসে মানত করলে নিঃসন্তানদের সন্তান হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো নারী পুরুষ এখানে আসেন। তাদের মনসকামনা পূরনের জন্য এখানে মানত করে থাকেন। কেউ মুরগি, কেউ মিষ্টি সহ নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে আসেন। এছাড়াও রয়েছে দানবাক্স, যার যা ইচ্ছে টাকা দিচ্ছেন ওই বাক্সে। শুক্রবার ছাড়াও প্রতিদিনই নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে আসেন নামাজ আদায় করতে। 

মসজিদ সম্পর্কে আরো অজানা তথ্য : মনোয়ার হোসেন সম্পাদিত ‘ঐতিহ্যে লালিত ফরিদপুর’ থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৭০০ শত বছর পূর্বে আলা-উদ্দিন হুসাইন শাহ ছিলেন বাদশা। তখন এই সাতৈর গ্রামে বহু আওলিয়ার বসবাস ছিলেন। তাদের মধ্যে হযরত শাহ সুফী শায়েখ শাহ ছতুরী (রাঃ) এর মুরিদ ছিলেন আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি সেই সময়ে নির্মিত হয়। সাতৈর শাহী মসজিদের পাশ ঘেঁষেই গেছে ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাংক রোড বা শের শাহ সড়ক। কেউ কেউ মনে করেন সাতৈর শাহ মসজিদ শের শাহের আমলের কীর্তি। 

খন্দকার ফজলুল করিম সম্পাদিত বই থেকে জানা যায়, মোগল আমলের অবসান হওয়ার পর তথাকথিত কতিপয় চক্রান্তকারী হিন্দু জমিদারগণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই পবিত্র সাতৈর গ্রামের সব রকম মুসলিম কীর্তি ইতিহাসের পাতা হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটিয়ে তারাও ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। কথিত আছে, এই সব জমিদারদের আমলে এই মসজিদটি তাদের দখলে ছিল। এমনকি মসজিদে নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে দেওয়া হত না। মোগল আমল থেকে প্রতি বৎসর ১লা চৈত্র হইতে ১২ই চৈত্র পর্যন্ত মসজিদের নিকটে মুসলমানদের ধর্মীয় জলসা (যাহাকে ইছালে ছাওয়াব বলা হয় তাহা) পালন করা হত। তথাকথিত হিন্দু জমিদারগণ তাহারও অবসান ঘটাইয়া উক্ত ধর্মীয় জলসাকে মেলায় পরিণত করিয়া গিয়াছে। বৃটিশ শাসনের অবসান হইবার কয়েক বৎসর পূর্বে আমাদের ফরিদপুর জেলার কৃতি সন্তান মৌলভী তমিজউদ্দিন সাহেবের প্রচেষ্টায় স্থানীয় কতিপয় মুসলমানদের লইয়া ইহা ছাড়া গোপালগঞ্জের হরিদাসপুর গ্রাম নিবাসী তৎকালীন বিখ্যাত মোজাম সরদারের লাঠির সাহায্যে পুনরায় এই পবিত্র আল্লাহর ঘর স্থানীয় মুসলমানদের হস্তগত হয়। অতি পরিতাপের বিষয়, ইহাতেও চক্রান্তকারী জমিদারদের হাত হইতে রেহাই পাওয়া যায় নাই। ঐ সময় সৈয়দপুরের প্রতাপশালী জমিদারগণ ৯০ বৎসরের জন্য এই মসজিদখানা ইজারা বন্দোবস্ত লইয়াছে বলিয়া দাবীদার হিসাবে সদর মুনসেফী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট বলিয়া হাকিম সাহেব রায় প্রদান করেন।

কিভাবে যাবেন সাতৈর শাহী জামে মসজিদে : দেশের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে ফরিদপুর জেলা শহরে আসতে হবে। জেলা শহর থেকে বোয়ালমারী গামী বাসে উঠতে হবে। ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে সাতৈর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক মসজিদটি। বাসে ছাড়াও সিএনজি অথবা ইজিবাইকেও যেতে পারবেন। 

খাওয়ার ব্যবস্থা : মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সাতৈর বাজারে রয়েছে ছোট বড় খাবার হোটেল। এছাড়া বোয়ালমারী উপজেলা সদরেও রয়েছে একাধিক ভালো মানের খাবার হোটেল। 

আবাসন ব্যবস্থা : সাতৈর মসজিদ এলাকায় আবাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। তবে মসজিদ হতে ৭ কি: মি: দূরে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে আবাসনের ব্যবস্থা আছে। সেখানে ছোট বড় আবাসিক হোটেল রয়েছে। এছাড়া জেলা সদরের আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

সাতৈর শাহী মসজিদটি দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহাসিক যত নিদর্শন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম। ঐতিহাসিক মসজিদটির পুরোনো ঐতিহ্য ঠিক রেখে, সুন্দর ও সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও সরকারের এগিয়ে আসার পাশাপাশি উন্নয়নের দাবি জানান স্থানীয়রা।

আসিফ

×