
সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে তাঁত বুনছেন কারিগর
ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতপল্লিগুলোতে। বিভিন্ন নকশার শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করছেন তাঁত শ্রমিকরা। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার শ্রমিক সংকটে কিছুটা হলেও বেগ পেতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। এ ছাড়া রং, সুতা ও বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়ায় শাড়ি-লুঙ্গি তৈরির খরচা বেড়েছে। জানা গেছে, তাঁতকুঞ্জ ব্র্যান্ডিং খ্যাত জেলা সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার মধ্যে বেশি কারখানা রয়েছে বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালীসহ ৫টি উপজেলায়।
জেলায় ইঞ্জিন ও হস্তচালিত প্রায় চার লাখের বেশি তাঁত রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট এনায়েতপুর ও সোহাগপুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমন ঘটছে, চলছে বেচাকেনা। তবে শ্রমিক সংকট ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধিতে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানা মালিকরা।
শ্রমিকদের কাজে আগ্রহ বাড়াতে সাপ্তাহিক হাজিরা বোনাস চালু করেছে এনায়েতপুরের খামারগ্রামের লাভলু বাবলু কম্পোজিট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ। জেলার তাঁতপল্লিতে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। তাঁরা নলি ভরা, সুতা প্রস্তুত করা, মাড় দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। এই অঞ্চলের উৎপাদিত শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। ঢাকার বিভিন্ন বুটিক হাউস এসব শাড়ি-লুঙ্গি রপ্তানি করছে।
শ্রমিকরা জানান, ঈদে অতিরিক্ত রোজগারের আশায় ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করছে। আমাদের পরিশ্রমে উৎপাদিত শাড়ির চাহিদা দেশজুড়ে হওয়ায় ভালো লাগে। তবে মুজুরি বৃদ্ধি না হলে যে হারে তাঁত শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছে এবং অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে এতে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।
বেলকুচি উপজেলার বেলকুচি তাঁত কারখানা মালিক আকছেদ আলী বলেন, তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এ জেলায় এ বছর ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন নকশার জামদানি, দেবদাস, কটন জামদানি, হাফ সিল্ক, কাতানসহ শাড়ি ও লুঙ্গি উৎপাদন হচ্ছে। এ অঞ্চলের শাড়ি ও লুঙ্গি-থ্রি পিস দেশীয় হাট বাজারসহ ভারতের বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন দামে শোরুম থেকে ক্রেতারা শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। তবে রং ও সুতাসহ কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
এ জন্য খুব একটা লাভবান হতে পারছি না। এনায়েতপুরের খামারগ্রাম লাভলু বাবলু কম্পোজিট টেক্সটাইলের ম্যানেজার এনামুল হক ও বিক্রয় প্রতিনিধি ইয়ামিন মুন্সি জানান, জেলায় ৪ লাখের ওপরে তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতে যে কাপড় উৎপাদন হয়। ঈদ কেন্দ্র করে ৯ হাজার কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হওয়ার কথা। আমরা ভালো শাড়ি তৈরি করি। এই শাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করি।
বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি আলহাজ আব্দুস ছামাদ খান জানান, ঈদ সামনে রেখে সিরাজগঞ্জসহ দেশের তাঁত শিল্পে শ্রমিক ও মালিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত শাড়ির সুনাম দেশজুড়ে রয়েছে। তবে এই শিল্পের প্রসার ও ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সমিতির পক্ষ থেকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।