ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

রাণীশংকৈলে স্ট্রবেরি চাষে সাফল্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১২ মার্চ ২০২৫

রাণীশংকৈলে স্ট্রবেরি চাষে সাফল্য

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে এখন পরিচিত হয়ে উঠেছে বিদেশি ফল স্ট্রবেরি। অল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রমে অধিক ফলন, বাজার চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ায় দেশের কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তেমনই উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা রাণীশংকৈল উপজেলায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ স্ট্রবেরি চাষ করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের কৃষক ইসরাফিল হোসেন।

সরেজমিনে স্ট্রবেরি ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্রবেরি পরিচর্যা ও বিক্রির জন্য স্ট্রবেরি তুলছেন কৃষক ইসরাফিল হোসেন। ওই এলাকায় নতুন এই ফসলের আবাদ দেখতে চাষাবাদে আগ্রহী কৃষক ও স্থানীয়রা নিয়মিত ক্ষেতে আসছেন। স্ট্রবেরি বিশ্বের অনেক দেশেই চাষ করা হয়। চীন স্ট্রবেরির বৃহত্তম উৎপাদক দেশ। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, মিশর, তুরস্ক, স্পেন, রাশিয়া, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে স্ট্রবেরির বারি-১, বারি-২, এবং বারি-৩ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্ট্রবেরি ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুয়েরসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল সমৃদ্ধ। গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় এই ফল, ফলের রস, জ্যাম, আইসক্রিম, মিল্ক শেক এবং আরও অনেক খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যবহৃত হয়। আঠারো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়।

সম্ভাবনাময়ী এ ফল সারাদেশে ব্যপকভাবে চাষ করা হলে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলছেন সংশ্লিষ্টরা। স্ট্রবেরি চাষী ইসরাফিল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা এনে ৫০ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। তার এই জমিতে প্রায় ৮ হাজার গাছ রয়েছে। এতে বীজ-পরিচর্যাসহ সবমিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় দেড়লাখ টাকা। প্রথম দিকে ২'হাজার টাকা কেজি বিক্রি করলেও বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি ভালো মানের স্ট্রবেরির পাইকারী দাম প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা।

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকে স্ট্রবেরি নিয়ে যাচ্ছেন। তার ৫০ শতক জমিতে ৪০ থেকে ৫০ মন ফলনের আশা করছেন। এখন পর্যন্ত ৪ লক্ষ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। আরো এক মাসের বেশি ফলন পাবেন সব মিলিয়ে ৭-৮ লক্ষ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে স্ট্রবেরি চাষের কথা জানান তিনি। তিনি আরো জানান, অক্টোবর মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফল আহরণ ও বিক্রি করা যায়।

রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন ‘রাণীশংকৈল একটি ফল ও সবজি উৎপাদনকারী এলাকা। বর্তমানে ইসরাফিল হোসেন স্ট্রবেরি চাষে সফলতা পেয়েছেন। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্ট্রবেরি চাষ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কৃষি বিভাগ তাকে সহায়তা দিয়েছে। তার সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’ 

আসিফ

×