
আন্তেনিও গুতেরেস ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চারদিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আগামীকাল শুক্রবার এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য এ ইফতারিতে শরিক হবেন তিনি। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক লাখ রোহিঙ্গা ইফতার করবেন বলে আমরা আশা করছি। ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে। রোহিঙ্গাদের জন্য এটি একটি ইউনিক এক্সপেরিয়েন্স হবে। নানা দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তারা ওই সময়টুকু কিছুটা স্বস্তি অনুভব করবেন বলে আশা করছি।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে আজ ঢাকায় আসবেন। আগামী ১৬ মার্চ তিনি ফিরে যাবেন। এই চারদিন বাংলাদেশে অবস্থানকালে তার মূল কর্মসূচি দুইদিন, ১৪ ও ১৫ মার্চ। জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় অবতরণের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাৎ শেষে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাবেন।
তার সঙ্গে একই বিমানে কক্সবাজার যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার কিছু কর্মসূচি আছে। তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরের একটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন এবং একটি জলবায়ু উদ্বাস্তু কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। পাশাপাশি একটি মডেল মসজিদেরও উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার থেকে সরাসরি চলে যাবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হবে। এরপর যাবেন রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে। রোহিঙ্গারা সেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবেন।
সেখানে রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গেও তিনি বসবেন এবং কক্সবাজারে একটি লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করবেন। এই প্রোগ্রামগুলো শেষ হলে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন, সেখানে প্রধান উপদেষ্টাও অংশ নেবেন।
আজাদ মজুমদার জানান, প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতিসংঘ মহাসচিব সেদিনই কক্সবাজার থেকে ফিরে আসবেন। পরদিন শুক্রবার মহাসচিব কর্মব্যস্ত দিন কাটাবেন। ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। দুপুরে চারটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এরপর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। শনিবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধান উপদেষ্টা তাঁর সম্মানে ইফতার ও ডিনার আয়োজন করবেন, সেখানে যোগদান করবেন। পরদিন তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন।
এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে অনেক। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মাধ্যমে এই মানবিক সহায়তাগুলো জোগাড় করার ওপর একটি ভূমিকা রাখবে। তাদের পুষ্টি সহায়তা খুবই জরুরি। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের পুষ্টির চাহিদা যাতে কোনোভাবে কম্প্রোমাইজ না হয়।
সেজন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার দরকার হয়। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর এখানে বিশ্বের নজর ফিরিয়ে আনবে। রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসে, সেটা যেন বন্ধ না হয়, তাতে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে জাতিসংঘ। তার সঙ্গে ফিনল্যান্ড এবং মালয়েশিয়া যুক্ত হয়েছে কো-স্পন্সর হিসেবে। আমরা আশা করছি জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকে ঘিরে এই আয়োজনে আরও ডেভেলপমেন্ট হবে। আমরা চাচ্ছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটা দ্রুত সমাধান তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ বুধবার রাজধানীতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে করা গণহত্যার মামলার বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন রোহিঙ্গা বিষয়ক ‘হাই রিপ্রেজেনটেটিভ’ ড. খলিলুর রহমান এবং গাম্বিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন দূত ড. মামাদুতাঙ্গারা। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা বিষয়ক বৈঠকে মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সফরে আসা জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ পরিস্থিতি অবহিত করা হবে।