ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

পদ্মা থেকে দিনে ২০ লাখ ঘনফুট বালু লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ২০:১৩, ১২ মার্চ ২০২৫

পদ্মা থেকে দিনে ২০ লাখ ঘনফুট বালু লুট

রাজবাড়ী : গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চরমহিদাপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে

জেলার গোয়ালন্দ উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় পদ্মা নদীতে একাধিক কাঁটার মেশিন (ড্রেজার) দিয়ে রাত-দিন দফায় দফায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে টোকেনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। ক্ষমতার দাপট দেখাতে বালু উত্তোলনের অন্তরালে চলে অস্ত্রের মহড়া। অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ পাহারা দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকে। দিন-রাত দফায় দফায় পদ্মা নদীর একাধিক জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায় রয়েছে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ও উজানচর এলাকার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদীতে একাধিক কাটার মেশিন (ড্রেজার) রয়েছে। পাশে অসংখ্য বাল্কহেড নোঙ্গর করা রয়েছে। কাঁটার মেশিনের সঙ্গে নোঙ্গর করা অবস্থায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছোট-বড় দুই শতাধিক বাল্কহেড অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ফুট বালু বিভিন্ন জেলায় টোকেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। অপরিচিত কেউ গেলে অস্ত্রধারী এই গ্রুপ স্পিডবোট নিয়ে তাদের ধাওয়া করে থাকে। যে কারণে কেউ বালু উত্তোলন এলাকায় চাওয়ার সাহস পায় না। গেলেও কেউ ছবি তুলতে পারে না।
এদিকে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর হ্রাস, তীরবর্তী ভূমি ক্ষয় এবং মিঠা পানির মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। এতে স্থানীয় আবাদি জমি বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে মো. আসলাম প্রামাণিক ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চরমহিদাপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মো. আলম গংয়ের নেতৃত্বে একাধিক লোডড্রেজার স্থাপন করে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মো. আসলাম প্রামাণিক বলেন, দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও নৌপুলিশকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলন আজও পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। বাধ্য হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে প্রতি নিয়ত পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন হলে নদী ভাঙনের কবলে পড়বে এলাকা। এতে শত শত হেক্টর আবাদি জমি নদীতে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ‘এশিয়ান বিল্ডার্স’ প্রো. আবিদ হাসান বিপ্লব এর নামে হরিরামপুর উপজেলার ‘লেছড়াগঞ্জ বালু মহল’ এক বছরের জন্য ১১ কোটি, ১১ লাখ, ১১ হাজার ১১ টাকায় ইজারা দিয়েছেন। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১০ শতাংশ আয়করসহ মোট ১৩ কোটি, ৮৮ লাখ, ৮৮ হাজার ৮৮০ টাকা। কিন্ত ‘এশিয়ান বিল্ডার্স’ ইজারা আইন উপেক্ষা করে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা মহিদাপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এখানে প্রতিদিন ২ শতাধিক বাল্কহেড বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি বাল্কহেড ৮ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুট নিয়ে যাচ্ছে। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। টোকেনের মাধ্যমে প্রতি ফুট বালু ৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে।  
ফরিদপুর নৌপুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ‘লেছড়াগঞ্জ বালু মহল’ ইজারা নিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। দৌলতদিয়া নৌপুলিশ প্রতিনিয়ত নদীতে টহল দিচ্ছেন। তবে রাজবাড়ী অথবা ফরিদপুর জেলার পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আমি একাধিকবার মোবাইল ফোনে জানতে পেড়েছি রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়নি।  
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাহিদুল রহমান বলেন, বালু উত্তোলন হচ্ছে এমন সংবাদ শুনেছি। মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ার কারণে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি যেখান থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে সেটা মানিকগঞ্জ-ফরিদপুর নাকি রাজবাড়ী জেলা। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি নদীর মধ্যে গিয়ে সীমানা নির্ধারণ করব। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের কাছে বালু মহালের বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এবং বলেছেন যত বড় প্রভাবশালী হোক অবৈধভাবে রাজবাড়ী জেলার মধ্যে পদ্মা নদী থেকে এক ফুট বালু উত্তোলন করতে পারবে না।

×