
ছবিঃ সংগ্রহীত
গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও এক শ্রমিককে মারধরের ঘটনার বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে মহানগরীর দুইটি এবং মৌচাক এলাকার একটি কারখানার শ্রমিকরা। এসময় তারা পৃথকভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়ক দুইটিতে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনরত শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ভাংচুর এড়াতে অন্তত ১০/১২টি কারখানা মঙ্গলবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মহানগরীর বাসন থানার কড্ডা নান্দুন এলাকায় কেমিও ইউএসএ নীটওয়্যার লিঃ কারখানার শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাওনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও শ্রমিকদের পাওনা বকেয়া পরিশোধ করেনি। সর্বশেষ সোমবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও পরিশোধ করা হয় নি। রাতে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এসময় মালিকপক্ষের লোকজন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এতে কয়েক শ্রমিক আহত হয়। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানায় মেশিনপত্র ও অফিস কক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং কারখানার অভ্যন্তরে কয়েকটি গাড়িতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে। তারা কারখানার ভিতরে তৈরীকৃত মালামালে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ভোগড়া-বাইপাস ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে উভয় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে কারখানার প্রশাসন বিভাগের নাজমা খাতুন জানান, কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করা হয়। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বেতন দেওয়ার কথা ছিল। এর আগেই কারখানার ডাইং এবং নিটিং সেকশনের শ্রমিকদের মধ্যে ঝামেলা হয়। মারধরের ঘটনার বিচার এবং বেতনের দাবিতে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানায় তাণ্ডব চালায়।
জিএমপি’র বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ জানান, বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে কেমিও ইউএসএ নীটওয়্যার লিঃ কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ভোগড়া বাইপাস সড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া একইদিনে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে অবস্থিত গ্লোবাস কারখানার শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় বিচারের দাবিতে সকাল হতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুর্ভোগে পড়েন যাতায়াতকারীরা। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ভাংচুরের আশংকায় আশপাশের অন্তত ১০/১২টি কারখানা এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বেলা ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের পোশাক তৈরির একটি কারখানার শ্রমিকদের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাওনা রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েও শ্রমিকদের ওই বকেয়া বেতন পরিশোধ করে নি। সর্বশেষ শ্রমিকদের দাবির মুখে গত ৯ মার্চ ওই বেতন পরিশোধের নির্ধারিত তারিখ ছিল। এদিন শ্রমিকরা দিনভর অপেক্ষা করলেও তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে শ্রমিকরা সোমবার কারখানার উৎপাদন কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে গেইটে নোটিশ টানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
পরদিন (মঙ্গলবার) সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে ওই নোটিশ দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা হোসেন মার্কেট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই মহাসড়কের উভয়দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা। অনেকে পায়ে হেঁটেই তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সকাল ৭টা থেকে শ্রমিকরা গত মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
ইমরান