
ছবি: জনকণ্ঠ
মরিচা ধরা লোহার পিলার ও রেলপথ সদৃশ পাতের ওপর ফাঁকা ফাঁকা কাঠ—দেখতে কোনো পরিত্যক্ত সেতুর ধ্বংসাবশেষ মনে হলেও প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে পারাপার হন কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থী। প্রায় এক যুগ ধরে এমন নাজুক অবস্থায় রয়েছে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত কলকলিয়া-মায়েরখালী কাঠের পোলটি।
ঝুঁকিপূর্ণ এই পোলটি দিয়েই মায়েরখালী, কলকলিয়া, গোয়ালখালী, কাঠালবাড়ি, বানিয়াখালীসহ অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ ফকিরহাট উপজেলা সদর ও জেলা শহরের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করেন। এছাড়া, পোলটির একপাশে থাকা কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলকলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। নাজুক এই পোল দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও এখনো পর্যন্ত পোলটির সংস্কার হয়নি। দ্রুত পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বারবার আবেদন করেও কাঠের পোলটি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকার লোকজন নিজেরাই চাঁদা তুলে বারবার সাময়িক সংস্কার করেছেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মেলেনি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা আফরিন বলেন, "১০ বছর ধরে এই পোল ব্যবহার করছি। আমাদের কাছে এটি এক অভিশাপ। এখন এটি একদম কঙ্কালসার হয়ে গেছে। স্কুলে যেতে গিয়ে কয়েকবার নদীতে পড়ে গেছি। সংস্কারের কথা অনেক বছর ধরে শুনছি, কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি।"
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া জানায়, "একদিন ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম, খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সরকার যেন দ্রুত আমাদের ব্রিজটা ঠিক করে দেয়।"
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে। নীলিমার মা সুবর্ণা সরকার বলেন, "বাচ্চাদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। বাধ্য হয়ে প্রতিদিন সঙ্গে যেতে হয়। এই ব্রিজ পার হতে নিজেকেই ভয় লাগে, ওরা তো এখনো ছোট। সরকারের কাছে অনুরোধ, অন্তত আমাদের এই ভয়টা দূর করে দিন।"
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলকিপার জিয়াউর রহমান বলেন, "ফকিরহাট ও মোল্লারহাট যাওয়ার জন্য এটি একমাত্র ব্রিজ। এই দুই উপজেলার মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান যোগাযোগ পথটি দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে দুই উপজেলার মানুষ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।"
ষাটোর্ধ্ব মৃণাল কান্তি বলেন, "এটি আমাদের একমাত্র পারাপারের মাধ্যম। এই ব্রিজের জন্য কত শিশুর বাবা-মা তাদের স্কুলে যেতে দেয় না, সেটা দেখার কেউ নেই। অনেক দপ্তরে ঘুরেও এখনো পর্যন্ত আমাদের কাঙ্ক্ষিত ব্রিজের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকার যেন দ্রুত আমাদের এই কাঠের পোলের পরিবর্তে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেয়।"
কলকলিয়া গুরুচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রজীত মজুমদার বলেন, "প্রতিদিন এই ব্রিজ পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি পুনঃনির্মাণ না হলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।"
এ বিষয়ে বাগেরহাট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, "কাঠের পোলের স্থানে ৫৫ মিটার দীর্ঘ আরসিসি সেতু নির্মাণের জন্য নকশা তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।"
সায়মা ইসলাম