ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ফুটেজ নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের উপর পুলিশের সাবেক এসপির হামলা

নাটোরে নারী নির্যাতন মামলায় সাবেক এসপির জামিন নামঞ্জুর

কালিদাস রায়, নাটোর

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১১ মার্চ ২০২৫

নাটোরে নারী নির্যাতন মামলায় সাবেক এসপির জামিন নামঞ্জুর

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

নারী নির্যাতন মামলায় বরখাস্ত হওয়া সাবেক পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হকের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুর রহিম এ আদেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা ফুটেজ ও ছবি নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা করেন আসামী ফজলুল হক। এই ঘটনায় আদালত চত্তর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল হককে প্রিজনভ্যানে তুলে দেয় এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক এসপি ফজলুল হক নাটোর সদর উপজেলার জংলী এলাকার মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আদালতের আদেশের পর ফজলুল হককে কোর্ট হাজত খানায় না রেখে পুলিশ তাকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের কক্ষে বসতে দেয়। এরপর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে কোর্ট ইন্সপেক্টরের রুম থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় আসামি ফজলুল হককে বের করা হয়। এসময় সাংবাদিকরা তার ছবি ও ভিডিও নিতে গেলে সাংবাদিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালান তিনি। এই ঘটনায় এখন টেলিভিশন, সময় টেলিভিশন ও এনটিভির ক্যামেরাপার্সন হাতে চোট পান। এমন উদ্ভৃত পরিস্থিতি পুলিশ আসামি ফজলুল হককে কারাগারে না নিয়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর নাটোর জেলা শহরে কর্মরত সাংবাদিকরা আদালত চত্ত¡রে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় সাংবাদিকরা দাবি করেন, সাবেক এসপি ফজলুল হককে অন্যান্য আসামির মতই হাতে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পড়িয়ে কারাগারে নিয়ে যেতে হবে। এরপর বিকাল ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত লোকজন তাকে ভূয়া ভূয়া বলে স্লোগান দিতে থাকে।

এখন টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন জাহিদুল ইসলাম সুমন জানান, আসামীকে কোর্ট ইন্সপেক্টরের রুম থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা ভিডিও নিচ্ছিলাম। এসময় তার হাতে হাতকড়া পড়ানো ছিল না। এমন সময় হঠাৎ তিনি আমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে ক্যামেরা ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। ক্যামেরা রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের হাতেও আঘাত লাগে।

একাত্তর টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ও ইউনিক প্রেমক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল আহমেদ জানান, প্রথমেই তাকে হাতকড়া পড়িয়ে আদালত থেকে কোর্ট পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হলে এই ঘটনা ঘটতো না। এখানে পুলিশ তাদের দায়িত্বে শৈথল্য দেখিয়েছেন। এছাড়া পুলিশ তাকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে কোর্ট হাজতে না রেখে কোর্ট ইন্সপেক্টরের রুমে বসতে দেওয়া হয়। এতে ফজলুল আরো সাহস পেয়ে যান। এই ঘটনায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।


যমুনা টেলিভিশনের নাটোর প্রতিনিধি ও নাটোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান জানান, একজন আসামির দ্বারা কোর্ট চত্তরে গণমাধ্যামর্কীদের উপর হামলা দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। এই ঘটনায় তিনজন ক্যামেরাপার্সন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অন্য আসামির মত তাকেও যদি হাতকড়া পড়িয়ে কারাগারে নেওয়া হত, তবে এমন হামলা করার সুযোগ পেত না।

নাটোর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মোস্তফা কামাল জানান, বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল হকের স্ত্রীর দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আতœসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তার জামিন না মঞ্জর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তাকে কোর্ট হেফাজতে নেওয়া হয়। কোর্ট হেফাজত থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তাকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালত, মামলার নথি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হকের বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তানদের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন তার স্ত্রী মেহনাজ আকতার আমিন। সেসময় তিনি জানান, ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর ফজলুল হকের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ২০২১ সালে র‌্যাবে কর্মরত অবস্থায় সেনাবাহিনী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথার বলার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার জেরে সরকার ফজলুল হককে শাস্তি দেয়। একই বছর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০২৩ সালে পুনরায় তাকে নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজের জন্য বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় তিনি একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরকীয়ায় বাধা দিলে স্ত্রী সন্তানদের উপর নির্যাতন চালান সাবেক এই কর্মকর্তা। পরে ২০২৪ সালে স্ত্রী মেহনাজ আকতার আমিন স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে ফজলুল হক অন্য নারীকে বিয়ে করে নাটোর সদর উপজেলার মোহনপুর এলাকায় বসবাস করছিলেন।

শিহাব

×