
কখনো প্রকাশ্যে কখনো রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে
খাগড়াছড়িজুড়ে চলছে পাহাড় কাটার মচ্ছব। কখনো প্রকাশ্যে কখনো রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার দায়ে জরিমানা ও জেল দিলেও থামছে না পাহাড় কাটা। ঘন ঘন বন্যার জন্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কর্তনকে দায়ী করেছে পরিবেশবাদীরা
খাগড়াছড়িতে পরিবেশ আইন না মেনে দেদার চলছে পাহাড় কাটা।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতের আঁধারে কাটা হয় পাহাড়। পাহাড় কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হচ্ছে। বেআইনিভাবে পাহাড় কাটার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। শুষ্ক মৌসুমে খাগড়াছড়িতে শুরু হয় পাহাড় কাটা। জায়গা ভরাট, বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা সংস্কার এবং ইটভাঁটিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পাহাড় কাটছে একটি চক্র। পাহাড়ের মাটি কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়খেকোরা। ছোট-বড় পাহাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র ।
বিভিন্ন উপজেলায় প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় বেআইনিভাবে চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন অভিযান চালানোর কদিন পর আবারো তা শুরু হয়। জেলার দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, গুইমারা ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও পাহাড়ে তা মানা হচ্ছে না। পাহাড় কাটার কারণে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধস, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা করছে পরিবেশবাদীরা।
খাগড়াছড়ির পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল জানান, পাহাড় কাটা বন্ধ না হলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্ষায় পার্বত্য জেলায় বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। প্রশাসনিকভাবে পাহাড় কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেদার পাহাড় কাটা চলছে। অবিলম্বে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে ভয়াবহ পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি উন্নয়নের নামে পাহাড় না কেটে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন ।
প্রশাসন বলছে, পাহাড় কর্তনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এমন অভিযান চলমান থাকবে । পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ । তিনি জানান, ইতোমধ্যে পাহাড় কর্তনের দায়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। যারা পাহাড় কাটবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পাহাড় কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর, খাগড়াছড়ির সহকারী পরিচালক হাসান আহমদ। তিনি জানান, ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার অভিযোগে একজনকে জেলও দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধে অধিকতর গুরত্ব দেওয়া হবে জানিয়েছে এই কর্মকর্তা ।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, পাহাড় কাটার ঘটনায় একাধিক জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত স্কেভেটরও জব্দ করেছে প্রশাসন। পাহাড় কাটার ব্যাপারেও বর্তমান প্রশাসন জিরো ট্রলারেন্সে রয়েছে । নিয়ম লক্স্ঘন করে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। প্রচলিত আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে জেলা প্রশাসন জেলার ২০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে দ-সহ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। তবে পরিবেশ বাদীদের অভিযোগ, চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে অন্তত এক হাজার পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে।
প্রকাশ্যে গাছ কাটার ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ
সংবাদদাতা, তালতলী, বরগুনা থেকে জানান, বরগুনার তালতলীতে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রকাশ্যে গাছ কাটার অভিযোগ উঠে নলবুনিয়া বিটে ওয়াচার হিসেবে কর্মরত জাহাঙ্গীর মিয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনার ৪০ দিন অতিবাহিত ও বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ।
জানা যায়, টেংরাগিরি বনাঞ্চলটি সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। বনটি বরগুনার তালতলী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই বনাঞ্চলের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্বাসমূলীয় বন স্থানীয়ভাবে ফাতরার বন নামে পরিচিত। এই বনের শুভ সন্ধ্যার সি বিচের বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময় গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
নলবুনিয়া বিটের আওতাধীন শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতের তীরে ১৫-২০ টি গাছ পড়েছিল। এই গাছ গত ২৮ জানুয়ারি পাচারের উদ্দেশ্যে বন থেকে প্রকাশ্যে গাছগুলো কাটেন জাহাঙ্গীর মিয়া। এ ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পার হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ। পরে এ বিষয়ে স্থানীয়রা বন বিভাগকে অবগত করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয়রা বিষয়টি সাংবাদিকদের জানালে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে চলতি বছরের ১ মার্চ বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজ করা হয়। এতেও টনক নড়েনি বন বিভাগের।
নলবুনিয়া বিটে ওয়াচার জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, আমি কিছুই জানি না। নলবুনিয়া বিট কর্মকর্তা শাওন বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, এ বিষয়ে বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।