
পোশাক শ্রমিকদের ৭ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
রাজধানীর বনানীতে পিকআপ চাপায় মিনা আক্তার নামের এক নারী শ্রমিক নিহত হওয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়েছে। সোমবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় কলাবাহী পিকআপের চাপায় নিহত হন মিনা আক্তার। এ ঘটনায় তার এক সহকর্মী আহত হন। এরপরেই এ ঘটনার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন কয়েক’শ গার্মেন্টস শ্রমিক। সকাল সাতটা থেকে টানা সাত ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা।
এতে করে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। বন্ধ হয়ে যায় এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচলও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। রোজা রেখে প্রখর রোদের মধ্যে হেঁটে গন্তব্যে ফেরেন হাজার হাজার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন বিদেশগামীরা। দুপুর দুইটার পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই গার্মেন্টস শ্রমিকরা মহাখালী-বনানী সড়ক উভয়দিকে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। যে কারণে বনানী, মহাখালী, গুলশানসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়।
এমনকি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপরও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ওই সড়কগুলো স্থবির হয়ে থাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে হাতিরঝিল, শাহবাগ, ফার্মগেট, বাড্ডা, মিরপুর, উত্তরাসহ পুরো শহরেই। যানজটের কারণে অফিসগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই যানজটে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার অভিযোগ করেন, অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান।
এদিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দাবি করেন, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনটি শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বনানী থানার পুলিশ, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এবং শিল্প পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুর দুইটার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেন।
গাজীপুরগামী প্রভাতী-বনশ্রী বাসের চালক নাজমুল মোল্লা বলেন, সকাল সাতটার পর বনানীতে পৌঁছান তিনি। এরপর বাসটি আটকে দেন শ্রমিকেরা। তখন থেকে একই জায়গায় আটকে ছিলেন তিনি। এ কারণে বাস থেকে সব যাত্রী নেমে গেছেন। হেঁটে বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন মাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাবেন। ঢাকার আগারগাঁও থেকে রওনা দিয়ে যানজটের কবলে পড়েন। পরে জানতে পারেন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এতে বাধ্য হয়ে হেঁটেই বিমানবন্দরের দিকে রওনা দিয়েছেন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরোয়ার বলেন, সকাল পৌনে সাতটার দিকে চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় কলাবাহী একটি পিকআপের চাপায় নিহত হন মিনা আক্তার। এ ঘটনায় তার এক সহকর্মী আহত হন। পিকআপটি ইতোমধ্যে পুলিশ জব্দ করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়িটিকে জব্দ করা হয়। তবে চালক পালিয়ে গেছেন। তাকে আটক করার চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. তারেক মাহমুদ বলেন, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকেরা তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে পিকআপ ও চালককে আটক, ক্ষতিপূরণ প্রদান ও নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা। চালককে আটকের পর ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দাবি পূরণের আশ্বাসে শ্রমিকেরা সড়ক ছেড়ে দেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক হাসিব হাসান খান বলেন, শত-শত গার্মেন্টসকর্মী এসে এক্সপ্রেসওয়ে আটকে দিয়েছিল। তারপরে আমরা আলোচনা করে এক্সপ্রেসওয়েতে আটকে যাওয়া গাড়িগুলো যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা বলেছি, তোমাদের দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে আবার বন্ধ থাকবে। সকাল সাতটা থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পিকআপের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত ॥ দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেট্রো-ন-১৪-০৭৬২ নম্বরের পিকআপটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর সাময়িক স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চালককে পিকআপের রেজিস্ট্রেশন সনদ, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকার ইকুরিয়ায় অবস্থিত বিআরটিএ’র উপপরিচালকের (ইঞ্জি.) কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। অন্যথায় পিকআপটির রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।