
ছবি:শহিদুল ইসলাম
রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী পাবলিক লাইব্রেরি আজ সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে। ইতোমধ্যে লাইব্রেরির ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দ্বিতীয় তলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দুর্লভ বইগুলোও। এছাড়াও শৌচাগারের সমস্যা, আলোর স্বল্পতা, পত্রিকার বকেয়া বিলসহ নানা সংকটে জর্জরিত হয়ে আছে লাইব্রেরিটি। দীর্ঘদিন ধরেই লাইব্রেরিটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় লেখক ও পাঠকরা।
পাবলিক লাইব্রেরি সূত্রে জানাযায়, এই লাইব্রেরিটি ১৯১৪ সালে রাজবাড়ী শহরের পান্নাচত্তর এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির উদ্বোধন করেন স্যার উডহেড। বর্তমানে লাইব্রেরিটিতে প্রায় পাঁচ হাজার বই রয়েছে এবং সপ্তাহে পাঁচ দিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এটাতে একটি পরিচালনা কমিটি কথা থাকলেও গত সাত বছর ধরে পরিচালনা কমিটির কোন নির্বাচন হতে দেখা যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, রড বেরিয়ে গেছে, অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। পুরোনো ও দুর্লভ বইগুলো পরিত্যক্ত কক্ষে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বই রাখার পর্যাপ্ত তাক না থাকায় অনেক বই উইপোকায় নষ্ট হচ্ছে। নিচতলার অবস্থাও জরাজীর্ণ। আলো স্বল্পতা, পানীয় জলের সংকট ও নষ্ট বৈদ্যুতিক পাখার কারণে পাঠকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
লাইব্রেরিতে বই পড়তে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাইব্রেরির বেশিরভাগ বই খুবই পুরোনো। অনেকগুলো বইয়ের পাতা উইপোকায় খেয়ে ফেলেছে। পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল না থাকায় পাঠকদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়তে হয়।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তৈমুর ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির যুগে গবেষণার জন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন। কিন্তু লাইব্রেরিতে কোনো সংযোগ নেই। ঝড়-বৃষ্টি হলে লাইব্রেরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থাও নেই।
রাজবাড়ী লেখক-পাঠক কেন্দ্রের সভাপতি নেহাল আহমেদ বলেন, এটি জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী লাইব্রেরি, কিন্তু বর্তমানে এটি ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে বইমুখী করতে হলে লাইব্রেরির আধুনিকায়ন অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
পত্রিকা এজেন্ট আব্দুল কুদ্দুস শেখ জানান, ২০১৯ সাল থেকে লাইব্রেরির পত্রিকার বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো সমাধান পাইনি।
সহকারী লাইব্রেরিয়ান বদিউল আলম বুলবুল বলেন, লাইব্রেরিটি ‘ক’ শ্রেণির হলেও এখানে পর্যাপ্ত বই নেই। দুর্লভ বইগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাঠকদের জন্য পর্যাপ্ত পত্রিকা ও বই সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে পাঠকসংখ্যাও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মিজ সুলতান আক্তার বলেন, লাইব্রেরি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।
আঁখি