
ছবি: সংগৃহীত
দেশে কোনো একটা অপরাধ ঘটলে তার আদলে অন্য কোনো বানোয়াট বা মিথ্যা ঘটনা ছড়িয়ে দেওয়া হয় পরিস্থিতিকে আরো জটিল করার উদ্দেশ্যে। ভিউ বাণিজ্যও এর পেছনে কাজ করে।
সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া কিছু ভুয়া খবর হলো:
১. মাগুরায় ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে। এরই মাঝে ৪ টি ছবি ভাইরাল হলেও, এর মাঝে একটি ছবিতে দেখা গেছে একটি শিশু অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। শিশুটিকে আছিয়া বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে, অনুসন্ধান করে জানা যায়, এই ছবির সাথে মাগুরায় ৮ বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এগুলো একজন আলোকচিত্রীর ফটোশ্যুটের অংশ। গত ৩ ফেব্রুয়ারি অনিন্দ্য দে নামের এক আলোকচিত্রীর ফেসবুক এ্যাকাউন্টের একটি পোস্টে ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
২. একটি ভিডিও ফেসবুকে ঘুরছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, নীলফামারীর নালাপাড়া গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৪ বছরের এক মেয়েকে অপহরণ করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। ইসলামপন্থী দলের দুই ব্যক্তি কাজটি করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ফ্যাক্ট চেকিং করে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার কিশোরী হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন। এছাড়াও, ধর্ষণের সাথে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
৩. শনিবার গাজীপুরে ধর্ষণের বিচার না পাওয়ায়, মেয়েকে নিয়ে বাবা ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমন দাবি প্রায় সবকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, তথ্যের বিশাল গড়মিল সামনে আসে। জানা গেল, ঘটনাটি প্রায় ৭ বছর আগের ২০১৭ সালের, যেটা এখনকার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
৪. গত ৫ মার্চ থেকে একটি পোস্ট বারবার ভাইরাল হচ্ছে- ’আজ ঢাকার অবস্থা খারাপ, ১৪৪ ধারা জারি’। কমেন্ট সেকশনে অনেকেই আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন। তবে পোস্টটি যে মিথ্যা তা জানা গেল ফ্যাক্ট চেকিং করে। ঢাকায় সম্প্রতি এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভিন্ন কোনো সংবাদ এখনকার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এসব গুজব বিষয়ে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুজ্জামান বলেন, ফেক নিউজের ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। এটি পূর্বে ছিল, বর্তমানেও হচ্ছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা হিটলারের সময় থেকেই এর প্রমাণ পাই। তাছাড়া, ভারতের অনেক গণমাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবে ফেক নিউজ প্রমোট করে থাকে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফেক নিউজের তালিকায় তেমন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। তবে বর্তমানে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিউজ দেখে আমরা শিক্ষিত মানুষও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি।
দেশে যখন কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে, তখন এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। জনগণকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার জন্য কিছু গ্রুপ এগুলো প্রচার করতে পারে। আরেকটি হতে পারে ন্যাচারাল ডিজাস্টার, সরকারের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য।
এক্ষেত্রে যারা এসব ফেক নিউজের শিকার তারা বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে তেমন সচেতন নয়। তারা ফেসবুক, ইউটিউব থেকে কোনো সংবাদ বা ভিডিও দেখে সহজেই প্রভাবিত হয়ে যান।
এক্ষেত্রে তাদেরকে ফেক নিউজ থেকে রক্ষা করার কিছু উপায় হতে পারে: জনমত সৃষ্টি করা, জনগণকে সচেতন করা, টিভি রেডিও চ্যানেল এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলোর জন্য একটি ফিল্টার সিস্টেমের ব্যবস্থা করা।
মায়মুনা