ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১

বির্তকিত কর্মকাণ্ডের দায় নেবেন না, তাই দলীয় পদ থেকে বিএনপি নেতার পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল।

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৫:৪৩, ১০ মার্চ ২০২৫

বির্তকিত কর্মকাণ্ডের দায় নেবেন না, তাই দলীয় পদ থেকে বিএনপি নেতার পদত্যাগ

বরিশালের জেলার নদীবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. গোলাম ওয়াহীদ হারুন দলীয় পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে গোটা জেলা এবং উপজেলা বিএনপিতে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।

পদত্যাগপত্রে মো. গোলাম ওয়াহীদ হারুন উল্লেখ করেছেন, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিতর্কিত কর্মতৎপরতা, অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা ও ইতোমধ্যে কুড়ানো দুর্নামের ভাগীদার না হবার দৃঢ় প্রত্যয়ে গত ৮ মার্চ থেকে কমিটির যুগ্ম আহবায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশের নেতৃত্ব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এবং অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান। 

মেহেন্দিঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করা যুগ্ম আহবায়ক গোলাম ওয়াহীদ হারুন রাজিব আহসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে আছেন ফরহাদ অনুসারীরা। 

অপরদিকে ৫ আগস্টের পর থেকেই উপজেলা বিএনপির এক অংশের বিরুদ্ধে চরের জমি দখল, গরু লুট, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি, মাটি লুটসহ চরের জমির ফসল লুটের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু কোনো অভিযোগেরই তদন্ত করেনি বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা। 

তবে ইতোপূর্বে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের দায়ে উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতাকে সাময়িক শাস্তির আওতায় এনেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে কখনো উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হয়নি।

এসব অভিযোগ এবং যুগ্ম আহবায়কের পদত্যাগের ব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক দীপেন জমাদ্দার বলেন, ২০২৩ সালের জুন মাসে আমাদের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠণ করা হয়েছে। সেই কমিটির দুই নম্বর যুগ্ম আহবায়ক গোলাম ওয়াহীদ হারুন। এখন পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, গোলাম ওয়াহীদের পদত্যাগের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ইতোপূর্বে তিনি আমাদের সাথে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেননি। বরং সবসময় তিনি আমাদের কার্যক্রমকে সমর্থন জানিয়েছেন। হঠাৎ করে তার এমন সিদ্ধান্ত এবং কমিটির বিরুদ্ধে অপবাদ তোলা অবান্তর। কেননা গোলাম ওয়াহীদ নিজেই সাংগঠনিক বা দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি পারিবারিক কাজে কখনো লন্ডন, কখনো বা খুলনায় থাকেন।


অপরদিকে যুগ্ম আহবায়ক গোলাম ওয়াহীদ হারুনের পদত্যাগপত্র হাতে পাননি দাবি করেছেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, গত ছয় মাস ধরে গোলাম ওয়াহীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম আমরা দেখিনি। 

হঠাৎ ফেসবুকে তার পদত্যাগপত্রটি পেয়েছি। কিন্তু এটি কোনো সাংগঠনিক নিয়ম নয়। কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে অবশ্যই পদত্যাগপত্র দায়িত্বশীলদের হাতে দিতে হবে। তাছাড়া পদত্যাগপত্রে অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেরর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়টিও আমরা ক্লিয়ার নই।

তবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতাদের বিতর্কিত অপতৎপরতার কথা শিকার করে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান শহিদুল্লাহ বলেন, ইতোপূর্বে উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ পেয়েছি। যা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হয়েছে। তবে এনিয়ে কেউ কিংবা যিনি পদত্যাগ করেছেন তিনিও কখনো অভিযোগ করেননি। 


রাজনীতিতে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম ওয়াহীদ হারুন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিএনপির ৯০ শতাংশ কর্মসূচিতে আমি ছিলাম। এখন যারা নেতা দাবি করছেন তারা তখন কোথায় ছিলেন। 

প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, যখন দেখলাম দলের সাংগঠনিক যে উদ্দেশ্য তা থেকে আমাদের অনেক নেতৃবৃন্দরা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়াচ্ছে তখন তাদের থেকে মনের কষ্টে দূরে সরে এসেছি। বিষয়টি ইতোপূর্বে উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ককে অবহিত করা সত্বেও তিনি গুরুত্ব দেননি। এ কারণে দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে গোলাম ওয়াহীদ হারুন বলেন, যেই কমিটির নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অমান্য করে মানুষের কল্যাণে না থেকে দলের বদনাম করে নিজেদের আখের গোছায় তাদের সাথে না থাকাটাই উত্তম।

রিফাত

×