
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
কুমিল্লায় এক প্রবাসীর কাছ থেকে ভূয়া র্যাব পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে দুই চাঁদাবাজকে আটক করেছে পুলিশ। প্রবাসী ফারুক তার অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্য দেশে ফিরে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরপরই একদল প্রতারক তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে।প্রবাসীর পরিবারের বিপদের সুযোগ নেয় প্রতারক চক্র।
ফারুকের ছেলে আরাফাত হোসেন (১০) কুমিল্লার কাশিনগর বাজারস্থ একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়ে। গত ৫ মার্চ দুর্ঘটনাবশত গরম ডাল শরীরে পড়ে গিয়ে গুরুতর দগ্ধ হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ফারুক ৬ মার্চ সকালে কাতার থেকে দেশে ফিরে ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা পিপলস্ হসপিটালে স্থানান্তর করেন।
ঠিক এ সময় এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফারুকের স্ত্রীকে ফোন করে জানায় যে, তার ছেলের এক সহপাঠীর অভিভাবক হিসেবে সে দেখতে আসতে চায়। সরল বিশ্বাসে তার স্ত্রী হাসপাতালের ঠিকানা দিলে ওই ব্যক্তি সেদিন রাতেই হাসপাতালে এসে দেখা করে চলে যায়। পরদিন রাত ৯টার দিকে এক ব্যক্তি দরজায় নক করলে ফারুক দরজা খুলতেই সে দ্রুত চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর, রাত ১১টার দিকে ৪ জন ব্যক্তি এসে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলে।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক চক্র ফারুককে জোরপূর্বক পাশের রুমে নিয়ে গিয়ে একটি রিভলভার তার কোমরে ঠেকিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বাধ্য হয়ে তিনি তখনই ২০ হাজার টাকা দেন এবং পরে আরও ৫০ হাজার টাকা শাশুড়ির কাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রতারকদের হাতে তুলে দেন। এরপর প্রতারক চক্র জানায়, তাকে হত্যার জন্য তার চাচাতো ভাই আমান উল্লাহ এবং স্বপন মজুমদার তাদের কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। পরদিন অবশিষ্ট টাকা দিতে হবে বলেও হুমকি দেয় তারা।
এ ঘটনায় আতঙ্কিত ফারুক পরিবারসহ হাসপাতাল ছেড়ে নিজ বাড়িতে চলে যান। এরপর তিনি কুমিল্লার এক আইনজীবীর মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রতারকদের চিহ্নিত করে। ৮ মার্চ বিকালে হাসপাতালের সামনে থেকে অভিযুক্ত মোঃ রুবেল ওরফে সৈয়দ রুবেল আহাম্মদ এবং মোঃ নীরব আহাম্মদ ওরফে দাগী রুবেলকে আটক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আটককৃতদের হেফাজতে নেয়।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা ইনচার্জ মুঠোফোনে জনকন্ঠ প্রতিনিধিকে জানান, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আরও জানিয়েছে, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তারা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করারও পরামর্শ দিয়েছে।
প্রবাসীদের টার্গেট করে চাঁদাবাজি নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এই ধরনের প্রতারণার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক