ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার ভাগ্নি: মামা-মামি আটক

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৭ মার্চ ২০২৫

পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার ভাগ্নি: মামা-মামি আটক

ছবি : সংগৃহীত

চাঁদপুর শহরের মাদরাসা রোড এলাকায় আপন ভাগ্নি রুজিনার (২০) ওপর অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগে মামা রুবেল মোল্লা ও মামি রোকেয়া বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ রুজিনাকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত দম্পতিকে থানায় নিয়ে যায়।

জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার মেয়ে রুজিনা ছয় মাস আগে মামার বাসায় কাজ করতে যান। মামাতো বোন শিশু রাজিয়া ও প্রতিবন্ধী মামাতো ভাই রিফাতের দেখাশোনা করার জন্য তাকে আনা হয়। কিন্তু বাসায় আসার পর থেকে মামি রোকেয়া বেগম কারণে-অকারণে নির্যাতন চালাতে থাকেন। মারধর ও গালমন্দ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে দেখতে পায়। তারা রুজিনার দুঃখজনক অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রুজিনাকে উদ্ধার করে এবং তার মামা ও মামিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

ওই এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম ও ফরহাদ হোসেন জানান, রুজিনাকে রাস্তার পাশে কান্না করতে দেখা যায়। তিনি জানান, তার ওপর নিয়মিত নির্যাতন চালানো হতো এবং তিনি মামার বাসা থেকে পালিয়ে এসেছেন। এরপর স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কাউসার ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুবেল মোল্লা ও তার স্ত্রী রোকেয়াকে আটক করেন।

রুজিনা অভিযোগ করেন, মামি রোকেয়া বেগম প্রতিনিয়ত অমানবিক নির্যাতন চালাতেন। কোনো কাজ সামান্য ভুল হলেই কাঠ, দা ও পুতা দিয়ে মারধর করতেন, যা তার শরীরে রক্তাক্ত জখমের সৃষ্টি করেছে। গত চার মাস ধরে তাকে নিয়মিত শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। মামা রুবেল কয়েকবার ওষুধ এনে দিলেও তার ক্ষত ভালো হয়নি।

ঘটনার খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন রুজিনার বাবা আলী আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে যে কেউ না দেখলে বিশ্বাস করবে না। আমি জানতামই না আমার মেয়ে এমন কষ্টে আছে। বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলে পরে নিয়ে আসব বলে সময়ক্ষেপণ করা হতো। রোকেয়ার এমন নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

মেয়ের দুর্দশা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলী আহম্মদ ভূঁইয়া।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাহার মিয়া জানান, “খবর পেয়ে আমরা নির্যাতনের শিকার মেয়েটিকে উদ্ধার করেছি। তার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী-স্ত্রীকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। আহত রুজিনাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই নৃশংস নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

মো. মহিউদ্দিন

×