ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন

বিক্ষোভের শহরে পরিণত হচ্ছে ঢাকা

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১০, ৭ মার্চ ২০২৫

বিক্ষোভের শহরে পরিণত হচ্ছে ঢাকা

হাইকোর্ট মাজার থেকে বৃহস্পতিবার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়

নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে নানা পেশার মানুষ রাস্তায় নামছে। বিক্ষোভ করছে। এর মধ্যে রয়েছে রিক্সাচালক, কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত।

অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বিক্ষোভের শহরে পরিণত হচ্ছে। প্রায় ২৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই বিশাল শহরে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হয়। এতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
বৃহস্পতিবার জাপানের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যান। এর পর ঢাকায় নিয়মিত বিরতিতে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।

আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, এটি একটি ক্রমবর্ধমান গণতান্ত্রিক স্পেসের লক্ষণ, যদিও প্রাথমিকভাবে এটি কিছুটা অসংগঠিতভাবে বিকশিত হয়েছে। বিকল্প কী? কেউ যদি তাদের দাবি তুলতে না পারে তবে কি সেটা ভালো?
হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে শাসনব্যবস্থা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার শাসনামলে খুন, অধিকার লঙ্ঘন, অপহরণ এবং দুর্নীতির মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। সমালোচকরা বলছেন, অভুত্থানে শ শ বিক্ষোভকারীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনার পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সালের পর থেকে নিয়মিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়ন চালায়।

সাম্প্রতিক এক বিক্ষোভে দেখা গেছে, হাসিনার বিরুদ্ধে অভুত্থানে আহত কয়েক ডজন মানুষ দ্রুত ও উন্নত মানের চিকিৎসাসেবার দাবিতে হাসপাতালের বেড ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এ সময় তারা শাহবাগ অবরোধ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমাজের বিভিন্ন অংশের পুঞ্জীভূত হতাশা এখন তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মনে হচ্ছে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) নির্ভর করার মতো পেশাদার ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী আইন প্রয়োগ কাঠামো তৈরি করতে পারেনি, যা এই অস্থিতিশীলতার কারণ।

কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই তবে কিছু অনুমান অনুযায়ী, হাসিনার পতনের পর থেকে ঢাকায় বিক্ষোভের সংখ্যা ১২০টিরও বেশি। নতুন সরকার শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনার এক কঠিন কাজ মোকাবিলা করছে। কারণ ১৭ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি সম্ভবত বছরের শেষ নাগাদ নতুন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। গত মাসে চাকরি হারানো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।

এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী লাঠি, জলকামান এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। একজন ক্ষুব্ধ শিক্ষক নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের মেয়াদে সব দাবি  পূরণ করতে পারছি না, তবে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণ করার চেষ্টা করছি।
এক মাস আগে হোটেল, রেস্তোরাঁ, টেলিযোগাযোগ-ইন্টারনেট, ওষুধ, কোমল পানীয় এবং সিগারেটসহ ১০০ টিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর কর বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ শুরু হয়। তবে ক্রমবর্ধমান দাম, তীব্র যানজট, বেকারত্বের এমন শহরে প্রতিনিয়ত বিক্ষোভে সবাই খুশি নন। ঢাকার বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, শহরের সর্বত্র বিক্ষোভকারীদের কারণে আজকাল যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে উত্তেজনা চরমে ওঠে যখন লোকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে দেয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়।
বিএনপি জানায়, সরকার দেশজুড়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্থিরতার সাম্প্রতিক ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঢেউ সাময়িক হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনতার শাসন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে।

×