
নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে বৃহস্পতিবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে সিইসি নাসির উদ্দিন বক্তব্য রাখেন
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচির আল্টিমেটাম দিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এমন আল্টিমেটাম দেন বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন।
তিনি বলেন, এনআইডি নিয়ে বারবার একেক সময় একেক রকম সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়। তারা এনআইডি নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে। এর আগে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছিল, মাঝে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এখন আবার নতুন কমিশন তৈরি করে তাতে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
এই কর্মকর্তারা আরও বলেন, ১৭-১৮ বছর ধরে কোনো সমস্যা হয়নি। আজকে এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি যার কারণে এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও যাবে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি। তা না হলে ১৩ মার্চ ইসি সচিবালয়সহ সারাদেশে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করব। তার পরও দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতিসহ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, এনআইডি কার্যক্রম যাতে ইসি থেকে না যায় সে বিষয়ে কমিশন সব উদ্যোগ নেবে। এনআইডি যদি ইসি থেকে অন্যত্র চলে যায় তা হলে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়বে। আমাদের উদ্বেগ জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। আগের কমিশন আমাদের সঙ্গে ছিল না। বর্তমান কমিশন আমাদের সঙ্গে থাকবে। স্যারেরাও চান এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকুক।
জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনসহ নাগরিক নিবন্ধন সেবা তদারকির জন্য ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে একটি নতুন স্বাধীন সংস্থা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইসির এনআইডি শাখার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
পরে তারা দাবি আদায়ের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে অ্যাসেসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিইসির কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
দুপুর ১টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যা সামনের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। শীঘ্রই ইসি থেকে সরকারকে চিঠি পাঠাব।’
সিইসি আরও বলেন, আমি নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বসেছি এবং আলোচনা হয়েছে। নতুন কমিশন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি শুনিনি। আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কীভাবে হতে পারে সে আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিতভাবে সরকারকে জানাব যে, এটি ইসির অধীনে থাকা উচিত। সরকারকে সেটি জরুরি ভিত্তিতে জানাব।
সিইসি আরও বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করি এবং এর অবস্থান সরকারকে উপস্থাপন করতে পারি। আমি আপনাদের দাবিগুলো সরকারের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরব।’
এনআইডি সেবা ইসির অধীনে না রাখার পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, আমি জানি না। সরকার হয়তো মনে করছে একটা জায়গা থেকে সার্ভিসটা দেবে। নির্বাচন কমিশনের অধীনেই সেটা হবে এমনটা শুনেছিলাম আমি।
ইসির কাছ থেকে এনআইডি সেবা চলে গেলে ভোটার তালিকায় কোনো সমস্যা হবে কি নাÑ জানতে চাইলে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, হবে। এনআইডিটা ভোটার তালিকার বাই প্রোডাক্ট। ১৭ বছর ধরে শ্রম, ঘাম দিয়েছে এখানকার লোকজন। এরাই তো এ পর্যন্ত এনেছে। সার্বিক বিষয়গুলো নিশ্চয় সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। হয়তো কমিউনিকেশনের একটা গ্যাপ থাকতে পারে। আমাদের লিখিত মতামত পাওয়ার পর নিশ্চয় গ্যাপ থাকবে না আশা করি।
তিনি বলেন, সরকার তো অনেক ওপরের ব্যাপার। আমরা সাংবিধানিক বডি। আইন যদি সরকার পরিবর্তন করে ফেলে আমাদের আইন মানতে হয়। কিন্তু আইন বানানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আমাদের মতামত জোরালোভাবে তুলে ধরবো। যেখানে যেখানে মতামত দেওয়া দরকার, দেবো। আমাদের পুরো কমিশন এটা চায়।
কমিশন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণকারী নই, এটি বুঝতে হবে। আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি ইসির পক্ষে কথা বলতে পারি, ইসির পক্ষে সরকারের কাছে অবস্থান তৈরি করতে পারি। এটুকু আমি জোরালোভাবেই করব।
এনআইডি শাখার কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঠেকাতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি না মানা হলে প্রথমে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, এরপর পূর্ণদিবস ধর্মঘট করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তারা। তাতেও দাবি আদায় না হলে সারাদেশে নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা।
নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ মতিউর রহমান জানান, ২০২৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ১২ মার্চের মধ্যে বাতিল করতে হবে। এই বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ১৩ মার্চ সকাল ১১টায় ইসি সচিবালয়, ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন শাখা, নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং দেশের সব মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হবে।
গত ১৭-১৮ বছর ধরে এনআইডি ইসিতে থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে ইসির এ কর্মকর্তা বলেন, আজকে এমন কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি যার কারণে এনআইডি ইসি থেকে অন্য কোথাও নিতে হবে। আমরা কমিশনকে জানিয়েছি, সময় দিয়েছি। আগামী বুধবারের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রত্যাশা করছি।