
ছবি: জনকণ্ঠ
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জমি বিক্রির আশ্বাসে সালমা আক্তার নামে এক গৃহবধূর ১২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা নাসির মাঝিসহ একটি প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রের মূল হোতা নাছির উদ্দিন ওরপে নাসির মাঝি উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৪ নাবার ওয়ার্ডের ছৈয়দ আহাম্মদের ছেলে । ভুক্তভোগী সালমা আক্তার একই উপজেলার চর ফলকন গ্রামের জেলে শাকিলের স্ত্রী। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর জজ আদালতে প্রতারক নাসির মাঝিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর আগে মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে সালমার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে তারা গৃহহীন হয়ে পড়েন। কোন উপায় না পেয়ে পরিবারের ৫ সদস্যসহ সালমা বৃদ্ধ কৃষক বাবা নুরুল হকের বাড়িতে ওঠেন। এর পর সালমা জমি কিনতে বাবা মা সহ প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় এবং ঋণ নিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা মৌজার আরএস ৮৪৩ নং খতিয়ান এবং ৬২৪ নং দলিলের ১৩৯০ নং দাগে ১ একর ৬০ শতাংশ জমি বিক্রি হবে মর্মে সন্ধান পায় সালমা। ওই জমির বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে ওই এলাকার নাসির মাঝি ও তার সহযোগীদের সাথে দেখা হয়। তখন নাসির মাঝি জানায় ২০ লাখ টাকা হলে তারা জমিটি ক্রয় করিয়ে দিবেন। তখন সালমা ওই জমি ১৫ লাখ টাকায় কিনতে রাজি হয়।
এরপর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুযারি স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করে তারা। নাসির মাঝি, তার প্রধান সহযোগী কামাল, কামালের স্ত্রী স্বপনা বেগম, কামালের শ্বশুর বশির মাঝিসহ সবাই মিলে সালমার থেকে কয়েক ধাপে ১২ লাখ টাকা নেন ওই প্রচারক চক্র। কয়েক দিন পর জমিও মেপে বুজিয়ে দিলে সালমা বাড়ির জন্য আড়া তৈরি করে এবং জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
এরই মধ্যে নাসিরের সহযোগী মোঃ কামাল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কামালের মৃত্যুর পরপরই পুরোপুরি উল্টে যায় নাসির মাঝি। ২-৩ দিনের মধ্যে সালমাকে জমি থেকে বিতাড়িত করে। প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে এবং থানা পুলিশের উপস্থিতিতে একাধিকবার বৈঠক হয়। বৈঠকে নাসির মাঝি স্বীকার করে তারা সালমাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিবেন অথবা টাকা ফেরত দিবেন। কিন্ত বৈঠক শেষ হলে সব অস্বীকার করে।
ভুক্তভোগী সালমা বলেন, জমি কিনতে নাসির মাঝির প্রতারণার কারণে আমার স্বামী আমার কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না। আমি ৩ সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে অসহায় অবস্থায় আছি।
জানা যায় শুধু সালমাই নয়; নাসির মাঝি চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক পরিবার এখন সর্ব শান্ত হয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতারক চক্রের মূল হোতা নাসির মাঝি জানান, ১২ লাখ টাকা তিনি একা গ্রহন করেননি। তিনি কিছু টাকা নিয়েছেন। বাকি টাকা মৃত কামাল নিয়ে ছিল। কামাল মারা যাওয়ার পর ওই জমি সালমার নামে রেজিষ্ট্রি না করে দিয়ে কামালের বাবা বশির মাঝি কামালের স্ত্রী স্বপনার নামে রেজিষ্ট্রি করিয়ে দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলনগর থানার এসআই হাফেজ আহাম্মদ খান বলেন, মামলাটি তদন্ত করে আমি জমি বিক্রির কথা বলে ১২ টাকা গ্রহনের সত্যতা পেয়েছি এবং আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি।
সায়মা ইসলাম