ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুড়িগ্রামে পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ৫ মার্চ ২০২৫

কুড়িগ্রামে পাওয়া যাচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন

বাজারের সুপার শপ ও দোকানগুলোতে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল

বাজারের সুপার শপ ও দোকানগুলোতে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে কৃত্রিম সংকটকে কাজে লাগিয়ে মুনাফ লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। তেলের কৃত্রিম সংকটে চরম ভোগান্তিতে ভোক্তারা। 
এদিকে কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট পরিবেশকদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন তেল চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি বলছেন, খোলা তেলে লাভ বেশি হওয়ায় দোকানিরা বোতলের তেল খুলে বিক্রি করছেন কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।
জেলা শহরের সুপার শপ ও একাধিক বাজারের পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতাদের দোকান ঘুরে পাওয়া যায়নি বোতলজাত সয়াবিন তেল। ফলে বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে খোলা তেল কিনে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন গ্রাহকরা। প্রতি লিটার খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়। তবে খোলা তেলে অতৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরেছেন ক্রেতারা।
স্থানীয় বিক্রেতারা জানান, কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট পরিবেশকদের কাছে তারা বারবার তাগিদ দিয়েও বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ পাচ্ছেন না। ক্রেতাদের খোলা তেল সরবরাহ করতে হচ্ছে। ক্রেতারা কয়েক দোকান ঘুরে না পেয়ে বাধ্য হয়ে এ তেল কিনে বাড়ি ফিরছেন।
কুড়িগ্রাম শহরের আদর্শ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করছে না। গ্রাহকরা বারবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাবি করলেও দিতে পারছি না। বাধ্য হয়েই গ্রাহকরা খোলা তেল নিয়ে ফিরছেন।

এ ছাড়া কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেল দিতে নানা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এক কার্টন তেল নিতে এক বস্তা প্যাকেট চাল, আটা কিংবা সরিষার তেল নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসব শর্ত দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না।’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ এবং পুষ্টি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা (এসআর) বোতলজাত তেলের সঙ্গে চাল, আটা ও সরিষার তেল নেওয়ার শর্তে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করতে চাচ্ছেন। রাজি হলে দুই কার্টনের বেশি তেল দিতে চাইছেন না তারা। ফলে গ্রাহকরা বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না।
শহরের মুদি দোকানি আয়নাল হক বলেন, ‘কোম্পানির অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত ছাড়া বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। কোম্পানিগুলো শর্তের জালে দোকানদারদের জিম্মি করছে। ডিলারদের ফোন দিলে বলছে তেল নাই।’
জিয়া বাজারে তেল নিতে আসা আমিনা বেগম বলেন, ‘বোতলের সয়াবিন কিনতে এসেছি। কোথাও পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনলাম।’আরেক গ্রাহক আনিছুর রহমান বলেন, ‘রমজান মাস আসলেই জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। জিনিসের দাম তো বেশি হয়, সঙ্গে সংকটও  তৈরি হয়। ইফতারসহ রান্নার কাজে সয়াবিনের ব্যবহার একটু বেশি হয়। সব পরিবারে একই রকম। কিন্তু বোতলের তেল কোথাও নেই। খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছি।’
কুড়িগ্রামে ফ্রেশ সয়াবিন তেলের ডিলার দবির হোসেন। যোগাযোগ করলে তার ম্যানেজার পাপ্পু বলেন, ‘কোম্পানি তেল না দিলে আমরা কী করবো। আমরা বারবার তেল চেয়েও পাচ্ছি না। তারা বলছে, তাদের তেলের সরবরাহ কম। আপনারা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেন।’
রূপচাঁদা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির বলেন, ‘আমরা তেল পাওয়ামাত্র মার্কেটে ছাড়ছি। সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও আমরা আটকে রাখছি না। জিয়া বাজার, পৌর বাজার, খলিলগঞ্জ বাজারসহ বিভন্ন বাজারে বোতলজাত তেল দিয়েছি। দোকানদারদের অভিযোগের বিষয়ে এই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘বোতলজাত তেলের চেয়ে খোলা বিক্রিতে লাভ বেশি। দোকানিরা বোতলের তেল খুলে বিক্রি করছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।’
গত সোমবার পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে কুড়িগ্রামে বাজার মনিটরিং নিয়ে প্র¯তিমূলক এক সভায় সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।
প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, বাজারে কোনো ধরনের কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক জরিমানা ছাড়াও কারাদন্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যে কোনো মূল্যে বাজার স্থিতিশীল রাখা হবে। জেলার সর্বত্র দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং হচ্ছে। কোথাও অসঙ্গতি দেখা দিলে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

×