
ভাঙ্গা থানা
ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায় পুলিশের বিবিধ ঘটনায় পিছু ছাড়ছে না সমালোচনা। ওসির শুন্যতায় গত সাতদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন ওসি তদন্ত ইন্দ্রজিত মল্লিক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ঘুষ বাণিজ্যর অভিযোগে থানার অফিসার ইন চার্জকে বদলী, অপর একজন ওসি যোগদান করার পর রাজনৈতিক মহলের কাছে যুবলীগ নেতা কর্মীরা থানায় ফুল দেওয়ায় বিতর্কিত ও ডিবি পুলিশের টিম থানা থেকে গ্রেপ্তারের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভাঙ্গা থানার পুলিশ অফিসার মোশাররফ হোসেনকে (এসআই) নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের আস্থাভাজন নেতার সাথে থানার অভ্যন্তরের ছবির পোস্ট ঘিরে পুলিশিং কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
এবিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে বিশেষ কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও খোদ পুলিশ সদস্যদের কারো কারো মধ্যেও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভাঙ্গা থানায় দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশ অফিসার থানায় রয়েছে। এদের অনেকে গোপালগঞ্জ বিভিন্ন জেলার এবং সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও কাজী জাফর উল্লাহর নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা থেকে গত ৫ মাসে বিতর্কিত একজন ওসি মোকছেদুর রহমানের বদলী ও জুলাই আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা নিহতের অভিযোগে ঢাকা ডিবি পুলিশের টিম ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলামকে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার ওপেন সিক্রেট ঘুষবাণিজ্যর পাশাপাশি পলাতক আ' লীগ নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তারে ধীর নীতি, জিরো টলারেন্স কথা বললেও উল্লেখযোগ্য মাদক কারবারি গ্রেপ্তারে বিশেষ অগ্রগতি না থাকা বিবিধ ঘটনা নিয়ে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় সরবে সকল মহলের কাছে কঠিন সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে ভাঙ্গা থানা পুলিশিং কার্যক্রম।
জানা গেছে, জুলাই আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ভাঙ্গা থানায় গত ৯ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ মোকছেদুর রহমান। নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য দাবী করে স্থামীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীকে কাছে টেনে নিজের আখের গোছানোর ফিকিরে পুলিশি কৌশল পরিচালনা করেন থানার অফিসার ইনচার্জ। যোগদানের মধ্যে সময়ে তিনি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিতর্কিত একঝাঁক সাংবাদিক নেতা ও দলীয় কর্মী নিয়ে থানায় অলিখিত দালাল চক্র দিয়ে সরাসরি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিলন মেলা গড়ে তোলেন থানার অভ্যন্তরে।
এনিয়ে পুলিশের উপর মহলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরও কয়েক দফায় বদলী করা হলেও রহস্যজনক কায়দায় ম্যানেজ করে ভাঙ্গা থানায় বহাল ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চুড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দাড়াতেই পুলিশের উচ্চ মহল থেকে ৫ মাসের মাথায় মাদারীপুর জেলায় বদলী করা হয়। তার বদলী হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছাস উদ্দীপনা ছিল লক্ষণীয়।
ওসি মোকছেদুর রহমানের বদলী হওয়ার পর তার স্থলে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থানায় যোগদান করেন। এমতাবস্থায় তার সাতদিন যেতে না যেতেই নবাগত অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জুলাই আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে গাজীপুর (সাবেক কর্ম স্থল) জনৈক ছাত্র হত্যা মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে থানায় গ্রেপ্তার হন।
এনিয়ে গত পাঁচ মাসে উল্লেখিত ঘটনার পাশাপাশি বিবিধ ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি চরম বিতর্কিত ও সমালোচনার সম্মুখীন সূত্রতায় এক সপ্তাহ জুড়ে ওসি শুন্যতায় চলছে ভাঙ্গা থানা পুলিশের কার্যক্রম।
ভাঙ্গা থানার সাবেক ওসির ঘুষ বাণিজ্যর ওপেন সিক্রেট ও অপর একজন ওসি গ্রেপ্তারের রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার রাত থেকে থানার অফিসার এসআই মোশাররফের সাথে আওয়ামী লীগের দোসরদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। নতুন করে সমালোচনার সম্মুখীন ভাঙ্গা থানা পুলিশের কার্যক্রম। সাধারণ মানুষের ভাষ্য এযেন সমালোচনা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ভাঙ্গা থানা পুলিশের।
এবিষয়ে এসআই মোশাররফ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ নিয় যদি কেউ কোন পোস্ট না বুঝে ছেড়ে দেয় আমাদের কিছু করনীয় নেই। পোস্টদাতা যেমন বুঝেছেন তিনি তাই করেছেন।
ওসি তদন্ত ইন্দ্রজিত মল্লিক বলেন, পুলিশ জানতে পেরেছে একজন বিএনপি নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। পুলিশ কাউকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে অথবা গ্রেপ্তার করলে অনেক সময় কিছু মালামাল পুলিশের কাছে থাকে। কিন্তু জামিনে এসে সেই মালামাল আবার পুলিশের কাছ থেকেই ফেরত নিয়ে থাকে। কিন্তু অনেকে না বুঝতে পেরে এটা ট্রল করে থাকে বলে জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গা থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি সার্কেল) সরাসরি কিছু বলতে রাজি না হলেও কথা প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ সব সময় চোখ কান খোলা রেখে পথ চলে। থানা সবার জন্য উন্মুক্ত। কেউ যদি আদালতের জামিনে এসে পুলিশের সাথে দেখা বা কথা বলেন পুলিশের কিছু করার নেই উল্লেখ করে আরও বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টটি তিনি দেখেছেন।
সাবরিনা/শহীদ