ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

কমলা খাওয়ায় এতিম কিশোরকে নির্মম নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৫ মার্চ ২০২৫

কমলা খাওয়ায় এতিম কিশোরকে নির্মম নির্যাতন

হাসপাতালে মেঝেতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এতিমখানার কিশোর সাগর হোসেন (১৬)। লাঠির অসংখ্য আঘাতে দগদগে ক্ষতচিহ্ন তার শরীরে। শরীরের প্রতিটি অংশের এই ক্ষত দেখে নিজেকে সামলাতে পারছেন না মমতাময়ী মা। সদর উপজেলার মথুরাপুর আদর্শ ইয়াতিমখানার বাসিন্দা এতিম সাগর হোসেন পাশবিক নির্যাতন করার পর ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানায় বুধবার ঘটেছে এই অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনার পর পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক ইমরান হাওলাদার।
এলাকাবাসী জানান, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে মধুপুর এতিমখানায়। ইফতারে বেচে যাওয়া মাত্র দুই টুকরো কমলা খেয়েছিল কিশোর সাগর হোসেন। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে গাছের ডাল আর ব্যাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। এতিম কিশোর সাগর হোসেনের মা মধুমালা খাতুন জানান, গত সোমবার এক ব্যক্তি এতিমখানায় ইফতারের আয়োজন করেন। ইফতার শেষে কিছু কমলালেবু বেচে যায়। রাতে ইয়াতিমখানার বাসিন্দা কিশোর সাগর হোসেন সেখান থেকে দুই টুকরো কমলা খায়। এই কারণে বুধবার ফজরের নামাজ শেষে তাকে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মেহগনি গাছের ডাল এবং ব্যাট দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন শিক্ষক ইমরান হাওলাদার। মারপিটে সাগর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাদের খবর দেয়। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এতিমখানার সুপুর জহুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত। এতিম কিশোর সাগরকে এভাবে মারপিটের ঘটনায় মাওলানা শিক্ষক ইমরান হাওলাদার বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় আমি নিজে বাদী হয়ে অভিযোগ দিয়েছে। সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ ঘটনায় তারা ওই শিক্ষককে এতিমখানা থেকে বরখাস্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ।
তুচ্ছ ঘটনায় শিশুকে ছেঁকা
নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, মাদ্রাসা থেকে পালানোর অপরাধে মা আসমা বেগম গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাকা দিয়েছেন, বাবা কামরুজ্জামান সিকদার গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত শিশু লামিয়া (৯) এমন অভিযোগ করেন। স্থানীয় দুই সাংবাদিক শিশুটিকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ছালমা শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। ঘটনা ঘটেছে তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের সওদাগরপাড়া গ্রামে বুধবার বিকেলে।
জানা গেছে, উপজেলার সওদাগরপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান সিকদারের শিশুকন্যা লামিয়া তালতলী শহরের আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বুধবার সকালে শিশু লামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের না বলে বাড়ি চলে যায়। ওইদিন দুুপুরে শিক্ষকরা মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা তার বাবা কামরুজ্জামানকে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাবা কামরুজ্জামান শিশুকন্যাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। শিশুটির অভিযোগ মা আসমা বেগম তাকে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছেন, বাবা গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। এতে শিশুটির শরীর ঝলসে গেছে এবং বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। মা আসমা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রায়ই মেয়েকে মারধর করে। আজকে মারধর শুরু করলে আমি ক্ষুব্ধ হয়ে খুন্তির ছ্যাকা দিয়েছি। এটা আমার অন্যায় হয়েছে।
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, শিশুটির শরীরের দুই স্থানে খুন্তির ছ্যাকার চিহ্ন রয়েছে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

×