
সুপেয় পানির দাবিতে পৌরবাসীর অবস্থান
বাগেরহাট পৌর শহরে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পৌরবাসীর চরম ভোগান্তি হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি ওই পানি রান্না ও খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় চরম দুর্ভোগে ভুগছেন প্রায় দুই লাখ বাসিন্দা।
পাশাপাশি সংকট ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় পানি সরবরাহের কারণে অধিকাংশ মানুষকে এখন খাওয়া ও রান্নার জন্য জারভর্তি পানি কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সুপেয় পানি সংকট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাগেরহাট শহরের বাসিন্দারা।
বাগেরহাট পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, পৌরসভার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৮ লাখ গ্যালন পানি প্রয়োজন হলেও সরবরাহ করা হয় মাত্র ৫ লাখ গ্যালনের মতো। ফলে ঘাটতি থাকে ৩ লাখ গ্যালন। শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সরবরাহে তীব্র সংকট দেখা দেয়।
এ জন্য পানি সরবরাহ তিন ভাগের এক ভাগে নেমে আসে। পাশাপাশি পানি সরবরাহ পাইপলাইন পুরাতন থাকায় অধিকাংশ স্থানে লিকেজ হয়ে ড্রেনের সঙ্গে একাকার হয়ে পানিতে দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। জেলার সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের পূর্ব সায়েড়া থেকে গভীর নলকূপে পানি উত্তোলন করে পানি আসে পৌরসভার দশানী ও বাসাবাটি পদ্মপুকুর এলাকার দুটি ওভারহেড পানির ট্যাঙ্কে।
এখান থেকেই পানি সরবরাহ করা হয় পৌর এলাকায়। বর্তমানে পৌরসভায় পানির গ্রাহক রয়েছেন ৬ হাজার ৫৫০ জন। এর মধ্যে ১৩৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামুল্যে পানি সরবরাহ করা হয়। তবে সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় ১ হাজার ২৫৪ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
বাগেরহাট শহরে এমন পরিস্থিতিতে পৌরসভার বাসিন্দারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধাননহ পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করে পানির গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, ট্যাঙ্কি নিয়মিত পরিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।
বাগেরহাট শহরের ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বাড়ি নিমার্ণের পর পানি লাইনের সংযোগ নেওয়া থেকে বছরের পর বছর কখনো ঠিকমতো পানি পাইনি। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে। এ ছাড়া পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ দেখা দেয়। সেখানে খাবার ও রান্নার জন্য পানি কিনে খেতে হয়।
৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনিরুল হক মণি বলেন, ‘পৌরসভার পানি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। পানিতে গন্ধ থাকায় তা ব্যবহারে উপযুক্ত নয়। আমরা বাইরে থেকে পানি কিনে খাই। পৌরসভার পানি শুধু বাথরুমের কাজে ব্যবহার করা হয়।’ আবেদ আলী নামে একজন বাসিন্দা বলেন, ‘পানি সংযোগ নেওয়ার পর থেকে কখনোই ঠিকমতো পানি পাইনি। বিল দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় পৌর কর্তৃপক্ষ আমার সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
করেছে। খাবার পানি বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। শুধু শুধু বিল দিতে যাব কেন? পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় তা খাওয়ার উপযুক্ত নয়।’ এমন অভিযোগ পৌরসভার বাসিন্দদের। বাগেরহাট পৌরভার সহকারী প্রকৌশলী টিএম রেজাউল হক রিজভী জানান, বাগেরহাট পৌরসভার পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট পৌরসভার পানি সরবরাহ ও পরিবেশগত স্যানিটেশন উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও শহরের পচাদীঘি থেকে এখনো পানি সরবরাহ শুরু করা যায়নি। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন থেকে পচাদীঘিটি আমাদের না দেওয়ায় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার পরেও পচাদীঘি থেকে আমরা পানি উত্তোলন করতে পারছি না। সরবরাহকৃত পানির দুর্গন্ধ বলেন, তবে সাপ্লাই লাইনের পাইপ অনেক পুরাতন হয়ে যাওয়ায় পানিতে দুর্গন্ধ হতে পারে। গত বছর একবার পানির ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করা হয়েছিল। প্রতিবার ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করতে পৌর কর্তৃপক্ষের দুই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়। বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় নিয়মিত ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করা হয় না।